নিজস্ব প্রতিবেদক
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে ৩১ ডিসেম্বর জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র দেওয়া হবে। এতে সরকারের কর্মপরিধি ও রাষ্ট্র কিভাবে চলবে, তার একটি ‘চাওয়া’ থাকতে পারে। যদি তা-ই হয়, এই ঘোষণাপত্রের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে বিএনপির সন্দেহ, সংশয় ও উদ্বেগ আছে।
ঘোষণাপত্র দেওয়ার আগে এ নিয়ে বিএনপির কেউ মন্তব্য করতে রাজি হননি।
তবে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস গতকাল এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘২০২৪ সালের আন্দোলনকে কেউ ব্র্যান্ডিং করার চেষ্টা করবেন না। শেখ হাসিনার পতনের বিষয়ে বালখিল্য কথা বলে কেউ জাতিকে বিভক্ত করবেন না।’
দলটির উচ্চপর্যায়ের নেতাদের ধারণা, দেশে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করার জন্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এই ঘোষণাপত্র দেওয়ার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে।
দলটির নীতিনির্ধারকরা বলছেন, সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে ছাত্র প্রতিনিধি আছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিনজন নেতা গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা। সংবিধানের আলোকে রাষ্ট্রপতির কাছে তাঁরা শপথ নিয়েছেন। তাহলে বিদ্যমান সরকার কাঠামোতে থেকে কিভাবে এ ধরনের ঘোষণাপত্র দেওয়া যায়?
জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র দেওয়ার ঘোষণা নিয়ে বিএনপির আনুষ্ঠানিক কোনো বৈঠক হয়নি। তবে দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা নিজেদের মধ্যে যে ধরনের আলোচনা করছেন, তাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের বক্তব্য ও কার্যক্রম নিয়ে তাঁরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
দলটির নেতারা বলেন, ঘোষণাপত্রে কী থাকছে তা কিছুটা আঁচ করা যাচ্ছে। এর ফলে দেশ আবার সংকটের মধ্যে পড়তে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য কালের কণ্ঠকে বলেন, রাষ্ট্রের প্রধান হচ্ছেন রাষ্ট্রপতি। তাঁর অধীনে অন্তর্বর্তী সরকার শপথ নিয়েছে। জুলাইয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীসহ ওই সময় মাঠে সক্রিয় সবাই তা মেনেও নিয়েছে।
তাহলে এখন যে ঘোষণাপত্র দেওয়া হবে তার ভিত্তিটা কী? আর গণ-অভ্যুত্থানের পাঁচ মাসের মাথায় এসে এই ধরনের ঘোষণাপত্র কেন-ই বা দেওয়া হবে।
দলের কেউ কেউ মনে করেন, বিশেষ একটি রাজনৈতিক দল ও মহলের ইন্ধনে দেশে বিরাজনৈতিকীকরণের একটি প্রকল্প হতে পারে এই ঘোষণাপত্র। ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারকে বিদায় দেওয়া হয়েছে। এখন বিএনপিকে টার্গেট করা হয়েছে, যাতে বিশেষ দল বা গোষ্ঠীর ক্ষমতায় যাওয়ার পথ প্রশস্ত হয়।
বিএনপির উচ্চপর্যায়ের নেতাদের ধারণা, নির্বাচনকে বিলম্বিত করার প্রক্রিয়ার অংশ হতে পারে এই ঘোষণাপত্র। কারণ কিছু দিন ধরে কয়েকজন উপদেষ্টা বলে আসছেন, শুধু নির্বাচনের জন্য এত লোক প্রাণ দেয়নি। এসব বক্তব্যের ধারাবাহিকতায় এই ঘোষণাপত্র দেওয়া হচ্ছে। তাঁদের বক্তব্যে পরিষ্কার, দেশ গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরে আসুক, তাঁরা তা চান না।
বিএনপির কর্ম পরিকল্পনা প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত আছেন—এমন একজন নেতা মনে করেন, শিক্ষার্থীরা দেশে তাদের স্থায়ী কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চায়। নইলে তাদের মধ্যে এই ধরনের আক্রমণাত্মক আচরণ কেন? ওই নেতা বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা নতুন দল গঠন করার পরিকল্পনা থেকে ঘোষণাপত্র দিতে পারেন। এতে কারো আপত্তি থাকার কথা নয়। কিন্তু তা করে শুধু কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে তার ভিত্তিতে ক্ষমতায় যাওয়ার পরিকল্পনা করলে তা বুমেরাং হবে।
দলটির নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, রাষ্ট্র সংস্কারের দুটি দিক আছে। একটি হচ্ছে, অবাধ নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে জরুরি সংস্কার। আরেকটি হচ্ছে, দীর্ঘমেয়াদি চলমান সংস্কার। দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া হতে পারে না। আর জনগণের অংশগ্রহণ চাইলে তা জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকারকে করতে হবে। কিন্তু জনগণের অংশগ্রহণকে পাশ কাটিয়ে ক্ষমতার ব্যবহারের মাধ্যমে সংস্কার করার আয়োজন করা হচ্ছে।