নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা ৭২ ঘন্টার কর্মবিরতির ঘোষণা করেছে। শনিবার (অক্টোবর) দুপুরে হাসপাতালের সামনে এক মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এ কর্মসূচি ঘোষণা দেয় ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা।
মানববন্ধনে রামেক হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ইমরান হোসেন ৭২ ঘণ্টার কর্মবিরতির ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, ‘আমরা হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে কাজে ফিরেছিলাম। কিন্তু এখন পর্যন্ত মামলা রেকর্ড হয়নি। এমনকি কাউকে গ্রেপ্তারও করা হয়নি। তাই পূর্বঘোষণা অনুযায়ী আজ এই মানববন্ধন থেকেই আমরা আগামী ৭২ ঘণ্টার জন্য কর্মবিরতিতে যাচ্ছি। এই তিন দিনের প্রতিদিন আমরা আমাদের দাবি নিয়ে হাসপাতালের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করব।
হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেন, ‘ইন্টার্নরা তাঁদের দাবি নিয়ে কর্মবিরতিতে গেছে। সিনিয়র ডাক্তাররা দায়িত্ব পালন করছেন। তবে ইন্টার্নরা না থাকলে সমস্যা হবেই। রাবি শিক্ষার্থী শাহরিয়ারের মৃত্যুর পর হাসপাতালে যে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছিল তার জন্য আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। আমরা লিখিত অভিযোগ দিলেও মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়নি। আমরাও ইন্টার্নদের দাবি যৌক্তিক মনে করছি।’
এর আগে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থী গোলাম মোস্তফা শাহরিয়ারের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে হাসপাতালে ভাঙচুর, ইন্টার্ন চিকিৎসকদের মারধর করার ঘটনায় মামলা রেকর্ড না করা ও এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার না করায় এ কর্মসূচি পালন করছেন ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা। এতে প্রায় অচল হয়ে পড়েছে উত্তরাঞ্চলের বৃহৎ এই হাসপাতালটি। হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ), বিভিন্ন কেবিনসহ ৫৭টি ওয়ার্ডে দিনরাত রোগীদের ভরসা ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা। পুরো হাসপাতালে প্রায় ২৫০ ইন্টার্ন চিকিৎসক দায়িত্ব পালন করেন। জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকেরা শুধু সকালে একবার ওয়ার্ডে রাউন্ড দেন। বাকি সময় ইন্টার্ন চিকিৎসকেরাই হাসপাতাল চালান। এখন ইন্টার্নদের কর্মবিরতির কারণে কোনো চিকিৎসক থাকছেন না।
গত বুধবার রাতে রাবির হবিবুর রহমান হলের তৃতীয় ব্লকের ছাদ থেকে পড়ে গুরুতর আহত হন মার্কেটিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার। ওই রাতে তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক শাহরিয়ারকে মৃত ঘোষণা করেন। এ সময় আইসিইউ না চেয়ে না পাওয়া এবং সঠিক সময় চিকিৎসা না হওয়ার অভিযোগ তুলে রাবি শিক্ষার্থীরা হাসপাতালে ব্যাপক ভাঙচুর চালান। ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের মারধরের ঘটনাও ঘটে। এরপর রাবি শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করতে থাকেন। পরবর্তীতে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাসে রাত ২টার দিকে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ফিরে যান।
শাহরিয়ারের মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত করতে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করেছে শহীদ হবিবুর রহমান হল প্রশাসন। কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন উপাচার্যের কাছে জমা দিতে বলা হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও আলাদা কমিটি করে ঘটনা তদন্ত করছে।
এ বিষয়ে রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএসএম সিদ্দিকুর রহমান বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যে অভিযোগ দিয়েছে তার তদন্ত চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়ও অভিযোগ দেবে বলে শুনছি। তারা অভিযোগ দিলে সেটাও নিয়ে তদন্ত করে দেখা হবে। তারপরই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
আমাদের কাগজ//টিএ





















