সারাদেশ ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ১০:০০

ঝুট কাপড়ে শতকোটির ব্যবসা, সৈয়দপুরে তৈরি জ্যাকেট রপ্তানি হয় বিদেশে

জেলা প্রতিনিধি
নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরে ঝুট কাপড় দিয়ে তৈরি হচ্ছে শীতের জ্যাকেট। ঢাকা থেকে ঝুট কাপড় এনে স্থানীয় প্রায় ৬০টি কারখানায় এসব জ্যাকেট তৈরি করা হয়। প্রতি বছর প্রায় ১২ লাখ পিস জ্যাকেট উৎপাদন হয় সৈয়দপুরে। দেশীয় বাজারের পাশাপাশি ভারত, নেপাল, ভুটানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যায় এসব জ্যাকেট। বছরে সব মিলিয়ে জ্যাকেট থেকে শতকোটি টাকার ব্যবসা হয়।

শীত মৌসুম ঘিরে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত শ্রমিকেরা কাপড় কাটা, সেলাই আর ডিজাইনের কাজে ব্যস্ত। ব্যবসায়ীরা জানালেন, গত বছর থেকে এবার ভালো দাম মিলবে বলে আশা করছেন তারা। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকাররা এসে অগ্রিম অর্ডার দিয়ে যাচ্ছেন।

দুই বছর আগে সৈয়দপুরে শতাধিক কারখানা থাকলেও বর্তমানে টিকে আছে প্রায় ৬০টি। কাঁচামালের সংকট ও মূল্যবৃদ্ধিসহ নানা কারণে কারখানার সংখ্যা কমেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। 

জ্যাকেট তৈরির কারিগর হাসান আলী বলেন, জুলাই মাস থেকেই জ্যাকেট তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। শীতকে সামনে রেখে চাপ সামাল দিতে আমরা আগে ভাগেই জ্যাকেট তৈরি করছি। এখনই ব্যস্ত সময় পার হচ্ছে, শীত বেশি হলে দম ফেলার সময় থাকবে না। আমরা প্রতি জ্যাকেট তৈরি করে ৭০ টাকা পাই। শীত বাড়লে সর্বোচ্চ ৮০ টাকা পাব।

আরেক কারিগর রহমত আলী বলেন, আমি প্রায় ৪ বছর ধরে জ্যাকেট তৈরীর কাজ করি। যখন জ্যাকেট তৈরীর কাজ থাকেনা তখন অন্য কাজ করি। এসব জ্যাকেট দেশের বিভিন্ন জায়গায় যায়। আমরা দৈনিক একজন ৬ টা থেকে ৭ করে জ্যাকেট তৈরী করি।

কারিগর আলামিন ইসলাম বলেন, জ্যাকেট তৈরি করা হয় খুব যত্নে। বিভিন্ন জায়গায় পাইকাররা এসে এখান থেকে জ্যাকেট কিনে নিয়ে যায়। কেউ তাদের নিজের পছন্দ মতো ডিজাইন দেয় আমরা সেটি করে দেই। শীতকে সামনে রেখে জ্যাকেট তৈরিতে ব্যস্ততা বাড়ছে।

তালহা গার্মেন্টসের মালিক খাইরুল আলম বলেন, আমার নিজস্ব কারখানা আছে সেখানে শ্রমিকরা দিনরাত কাজ করছে। সামনে শীত আসছে, এ সময়ে হঠাৎ করে অনেক অর্ডার চলে আসে সেগুলো সামাল দেওয়া সম্ভব হয় না। এজন্য আমরা আগেই তৈরি করে গোডাউনে মজুদ করে রাখছি যাতে চাপ সামাল দিতে পারি। আমরা জ্যাকেট প্রতি পাইকারি দাম ৪০০ থেকে সর্বোচ্চ ৬০০ টাকা বিক্রি করে থাকি। গত বছর প্রায় ৩ কোটি টাকার মধ্যে বিক্রি হয়েছে আমার কারখানা থেকে। এবার জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে সেদিক থেকে এবার ৪ থেকে ৫ কোটি টাকার মতো ব্যবসা হবে বলে আশা করছি।

রিহান গার্মেন্টসের মালিক রুবেল ইসলাম বলেন, প্রতি বছর সৈয়দপুরে তৈরি জ্যাকেট বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়। এখানে তৈরি জ্যাকেটের গুনগত মান খুব ভালো। এজন্য ক্রেতাদের চাহিদা অনেক বেশি। শীত শুরু হলে আমরা কাজের চাপ সামাল দিতে পারি না। কাজ শুরু করে নিজস্ব গোডাউনে মজুদ করে রাখছি। শহরের প্রতি কারখানায় বছরে প্রায় ২ থেকে ৩ কোটি টাকার মতো ব্যবসা করে কারখানার মালিকরা। এখানে প্রায় ৬০টি কারখানা রয়েছে বছরে সব মিলিয়ে প্রায় শতকোটি টাকার ব্যবসা হয়।

বিসমিল্লাহ গার্মেন্টসের মালিক আব্দুর রহমান বলেন, প্রতি বছর জ্যাকেট ভালো বিক্রি হয়ে থাকে। তবে এবার জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে আগে যেটা ১০০ টাকায় কিনতাম এবার সেটা ১৩০ থেকে ১৫০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। সেদিক থেকে জিনিসপত্রের দাম বাড়ায় এবার জ্যাকেটের দাম বাড়বে তবে গতবারের থেকে এবার ভালো ব্যবসার আশা করছি।