নিজস্ব প্রতিবেদক:
সোস্যাল মিডিয়ায় অশ্লীলতা ছড়িয়ে বাংলাদেশি নাগরিকদের কাছ থেকে ১০৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে বিগো বাংলার‘বিগো অ্যাপ’। এছাড়া ৭৯ কোটি টাকা বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পাচারের অভিযোগ রয়েছে। এমনটাই বলছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
এ ঘটনায় বিগো বাংলার ব্যবস্থাপনা পরিচালক চীনা নাগরিক ইয়াও জি–সহ পাঁচজনের নামে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা হয়েছে।
মামলার বাদী সিআইডির উপপরিদর্শক (এসআই) সোহেল রানা বলেন, তিনি বিগো লাইভের বিরুদ্ধে এক বছরের বেশি সময় ধরে অর্থ পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধান করেন। পরে অর্থ পাচারের কাগজপত্র জোগাড় সাপেক্ষে গত ২৫ সেপ্টেম্বর মামলা করেন। মামলায় বিগো বাংলা লিমিটেড, বিগো বাংলার কর্মী এস এম নাজমুল হক, আরিফ হোসেন এবং মনসন হোল্ডিং নামের প্রতিষ্ঠানটিকে আসামি করা হয়েছে।
বিগো অ্যাপের লাইভ ভিডিওর মাধ্যমে অশ্লীলতা ছড়ানোর অভিযোগে গত বছরের জুন মাসে চীনা নাগরিক ইয়াও জি–সহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। পরে তাঁদের বিরুদ্ধে পল্টন থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা ও পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা হয়। মামলার অপর চার আসামি হলেন বিগো বাংলার কর্মী মোস্তাফা সাইফ রেজা, আরিফ হোসেন, এস এম নাজমুল হক ও আসমা উল হুসনা সেজুতী। চীনা নাগরিকসহ অন্যরা এখন কারাগারে।
মামলাটি তদন্ত করতে গিয়ে বিগো লাইভ বাংলা লিমিটেডের বিদেশে অর্থ পাচারের বিষয়টি জানতে পারে সিআইডি। পরে অর্থ পাচারের অভিযোগের বিষয়টি অনুসন্ধান শুরু করেন সিআইডির এসআই সোহেল রানা। বিগো বাংলার বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ পাওয়ায় সংস্থাটি মামলা করেছে।
বাংলাদেশে বিগো অ্যাপের ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে যৌন উত্তেজনা সৃষ্টিকারী অশ্লীল সংলাপ, অভিনয়, অঙ্গভঙ্গি ছড়ানোর অভিযোগ রয়েছে। বিগো অ্যাপের ব্যবহারকারীদের বড় অংশ তরুণ-তরুণী এবং প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিক। এই অ্যাপে দুই ধরনের আইডি রয়েছে। একটি আইডির নাম ব্রডকাস্টার। ব্রডকাস্টার আইডি ব্যবহার করেন তরুণ-তরুণীরা।
ভিডিও স্ট্রিমিংয়ের নামে অশ্লীলতা ছড়িয়ে দেওয়া হয়। লাইভ স্ট্রিমিংয়ে আড্ডা দেওয়ার জন্য ব্যবহারকারীদের ভার্চ্যুয়াল মুদ্রা ডায়মন্ড কিংবা বিনস কিনতে হয়। মুঠোফোনভিত্তিক আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের অ্যাপের মাধ্যমে ডায়মন্ড কেনা যেত।
মামলার এজাহারের তথ্য বলছে, বিগো বাংলা লিমিটেড অর্থ পাচারের জন্য মনসুন হোল্ডিং লিমিটেডের গেটওয়ে সূর্যমুখী লিমিটেড থেকে অর্থ গ্রহণ করেছে। মনসুন হোল্ডিং কিংবা সূর্যমুখী নামক প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পেমেন্ট সিস্টেম অপারেটর হিসেবে নিবন্ধিত নয়।
বাংলাদেশে বিগো বাংলার দুটি ব্যাংক হিসাবের তথ্য মিলেছে। ২০২০ সালের ১৫ জানুয়ারি থেকে গত বছরের ১৮ জুলাই পর্যন্ত ওই দুটি হিসাবে জমা হয় ৪৩ কোটি টাকা। উত্তোলন করা হয়েছে ১৪ কোটি টাকা। জমা রয়েছে আরও ২৯ কোটি টাকা। আদালতের আদেশে ওই টাকা অবরুদ্ধ করা হয়েছে।
এজাহারে আরো বলা হয়েছে, বিগো বাংলার শেয়ারিং অ্যাপ বিগো লাইভের লাইভ চ্যাট ও লাইভ ভিডিওর মাধ্যমে যৌন উত্তেজনা সৃষ্টিকারী অশ্লীল সংলাপ ও ভিডিও চিত্র দেখিয়ে গ্রাহকদের ফাঁদে ফেলা হয়। পরে ভার্চ্যুয়াল মুদ্রা বিক্রির নামে গ্রাহকের কাছ থেকে ১০৮ কোটি টাকা আদায় করেছে বিগো বাংলা। এর মধ্যে ২৯ কোটি আদালতের আদেশে অবরুদ্ধ (ফ্রিজ) করা হয়েছে। বাকি ৭৯ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে।
আমাদের কাগজ//জেডআই






















