খেলাধুলা ৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ০৮:৩০

৪ উইকেটে জিতে সিরিজ সমতায় বাংলাদেশ

স্পোর্টস ডেস্ক দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে সংক্ষিপ্ত স্কোর: বাংলাদেশ ১৯.৪ ওভারে ১৭৪/৬ (সাইফউদ্দিন ১৭*, মেহেদী ৬*; তানজিদ ৭, পারভেজ ৪৩, লিটন ৫৭, সাইফ ২২, হৃদয় ৬, সোহান ৫) ফল: বাংলাদেশ ৪ উইকেটে জয়ী। আয়ারল্যান্ড ২০ ওভারে ১৭০/৬ (ডেলানি ১০*; স্টার্লিং ২৯, টিম ৩৮, হ্যারি ১১, ক্যালিটজ ৭, ডকরেল ১৮, টাকার ৪১) চট্টগ্রামে সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৩৯ রানে হারের পর দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে জয়ের দেখা পেয়েছে বাংলাদেশ। শেষ দিকে থ্রিলারে পরিণত হওয়া ম্যাচে বাংলাদেশ ২ বল হাতে রেখে আয়ারল্যান্ডকে হারিয়েছে ৪ উইকেটে। এই জয়ে ৩ ম্যাচ সিরিজে ১-১ সমতা ফিরিয়েছে স্বাগতিক দল। ১৭১ রানের লক্ষ্যে ১৮তম ওভারে নুরুল হাসান সোহানের আউটে ভীষণ চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। ১২ বলে প্রয়োজন পড়ে ১৬ রানের। ওই ওভারেই একটি ছক্কা ও চার মেরে দলকে জয়ের কাছে নিয়ে যান সাইফউদ্দিন। শেষ ওভারে ৬ বলে সমীকরণ নিয়ে আনেন ৩ রানে। তার পর চতুর্থ বলে বাউন্ডারি মেরে জয় নিশ্চিত করেন মেহেদী হাসান। সাইফ ৭ বলে ২ চার ও ২ ছক্কার ক্যামিও ইনিংসে ১৭ রানে অপরাজিত থাকেন। মেহেদী অপরাজিত থাকেন ৬ রানে। বাংলাদেশকে জয়ের পথে তুলেছেন অধিনায়ক লিটন দাস। ৩৭ বলে ৫৭ রানের ঝড়ো ইনিংস উপহার দেন তিনি। ম্যাচসেরাও তিনি। তাছাড়া ওপেনার পারভেজ হোসেন খেলেন ২৮ বলে ৪৩ রানের ইনিংস। লিটন দুটি জুটি গড়ে জয়ের মঞ্চ গড়তে ভূমিকা রাখেন। শুরুতে পারভেজের সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেটে যোগ করেন ৬০, তার পর সাইফকে নিয়ে যোগ করেন আরও ৫২ রান। অবশ্য ১০.৪ ওভারে লিটন ৩৩ রানে ক্যাচ আউট হলে ম্যাচের দৃশ্যপট ভিন্ন হতে পারতো। ডেলানি ভারসাম্য হারিয়ে বাউন্ডারি লাইনে ক্যাচ নিলেও সে সময় ট্রাউজারের পেছনে থাকা তোয়ালে সীমানা স্পর্শ করায় সেটা ছক্কা হয়ে যায়। আয়ারল্যান্ডের হয়ে মার্ক অ্যাডায়ার ৩৬ রানে উইকেট নেন দুটি। ২৮ রানে দুটি নেন গ্যারেথ ডেলানি। শুরুতে টস জিতে ব্যাট করে ৬ উইকেটে ১৭০ রানের সংগ্রহ দাঁড় করিয়েছিল আয়ারল্যান্ড। হৃদয়ের পর বোল্ড সোহান চাপের মুহূর্তে দলকে রক্ষা করতে পারেননি হৃদয়। বরং দলের ১৪৯ রানে রান নেওয়ার তাড়ায় রানআউট হয়ে ফিরেছেন তিনি। তাতে পড়ে বাংলাদেশের পঞ্চম উইকেট। হৃদয় আউট হন ৬ রানে। পরের ওভারে ৫ রানে অ্যাডায়ারের বলে বোল্ড হন নুরুল হাসান সোহানও। লিটনের আউটের পর ফিরলেন সাইফও পারভেজের সঙ্গে দুর্দান্ত জুটি ভাঙলেও বাংলাদেশকে জয়ের পথে টেনে নিচ্ছিলেন লিটন দাস। ৩৪ বলে তুলে নেন ১৬তম ফিফটি। তাছাড়া সাইফ হাসানকে সঙ্গে নিয়ে তৃতীয় উইকেটে ৩১ বলে বলে যোগ করেন ৫২ রান। জয়ের কাছে থাকা অবস্থাতেই দলের ১৩৮ রানে এলবিডাব্লিউ হন বাংলাদেশ অধিনায়ক। তাকে আউট করেন মার্ক অ্যাডায়ার। লিটনের ৩৭ বলে ৫৭ রানের ইনিংসে ছিল ৩টি চার ও ৩ টি ছয়। পরের ওভারে ডেলানির ঘূর্ণিতে ক্যাচ আউট হন সাইফ হাসানও। তার ১৭ বলে ২২ রানের ইনিংসে ছিল ১টি চার ও ১টি ছয়। বাংলাদেশ চতুর্থ উইকেট হারায় ১৪০ রানে। ৬০ রানের জুটি ভাঙলো পারভেজের আউটে ২৬ রানে উদ্বোধনী জুটি ভাঙার পর বাংলাদেশকে টেনে নিচ্ছিলেন পারভেজ হোসেন ও লিটন দাস। ৪৩ বলে ৬০ রান যোগ করেন তারা। দলীয় ৮৬ রানে এই জুটি ভেঙেছেন গ্যারেথ ডেলানি। রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে ২৮ বলে ৪৩ রানে ক্যাচ আউট হন পারভেজ। তার ইনিংসে ছিল ৫টি চার ও ২টি ছয়। পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশের ৬৬ রান ২৬ রানে অহেতুক রানআউটে পড়েছে বাংলাদেশের প্রথম উইকেট। তার পর আইরিশ বোলারদের ওপর চড়াও হয়ে খেলেছেন অধিনায়ক লিটন দাস ও পারভেজ হোসেন। পাওয়ার প্লেতে তাদের ব্যাটে ১ উইকেটে যোগ হয়েছে ৬৬ রান। লিটন এই সময় মাত্র ১১ বলে ১টি চার ও ১ ছক্কায় করেন ১৮ রান। পারভেজ ১৫ বলে ৫টি চার ও ১ ছক্কায় করেন ৩১। তানজিদের রানআউটে ভাঙলো উদ্বোধনী জুটি ১৭১ রানের লক্ষ্যে দারুণ সূচনা করেছিলেন দুই ওপেনার পারভেজ হোসেন ও তানজিদ হাসান। পারভেজই ছিলেন বেশি আক্রমণাত্মক। তানজিদ ছিলেন খোলসবন্দি। তৃতীয় ওভারে অযথা সিঙ্গেল নিতে গিয়ে রানআউট হন ওপেনার তানজিদ হাসান। তিনি ১০ বলে ফেরেন ৭ রানে। তাতে ছিল একটি চার। বাংলাদেশ শুরুর উইকেট হারায় ২৬ রানে। বাংলাদেশকে ১৭১ রানের লক্ষ্য দিয়েছে আয়ারল্যান্ড দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতেও দুর্দান্ত ব্যাটিং উপহার দিয়েছে আয়ারল্যান্ড। টস জিতে ৬ উইকেটে সংগ্রহ করেছে ১৭০ রান। পাওয়ার প্লে শেষে আইরিশদের সংগ্রহ ছিল ১ উইকেটে ৭৫। যার মূলে ছিলেন টিম টেক্টর ও পল স্টার্লিং। ওপেনিং জুটিতেই আসে ৫৭ রান। ফেরার আগে স্টার্লিং ১৪ বলে ৩ চার ও ২ ছক্কায় করেন ২৯। তার পর ধীরে ধীরে বোলিংয়ে পরিবর্তন এনে ম্যাচের দৃশ্যপটে বদল আনতে পেরেছিল বাংলাদেশ। গতি কমিয়ে ব্যাক অফ লেংথে বোলিং শুরু করেন স্বাগতিক পেসাররা। অপরদিকে স্পিনাররাও চেপে ধরেন আইরিশদের। মেহেদীর এক ওভারে ফেরেন টিম টেক্টর (৩৮) ও হ্যারি টেক্টর (১১)। তাতে শুরুতে বড় স্কোরের সম্ভাবনা মিলিয়ে যেতে থাকে আয়ারল্যান্ডের। ১১তম ওভারে মেহেদী চতুর্থ উইকেটও এনে দেন। তার পর অবশ্য পঞ্চম উইকেটে লরকান টাকার ও জর্জ ডকরেলের ৫৬ রানের জুটি ইনিংসটাকে ভালো অবস্থানে নিয়ে গেছে। ডকরেলকে (১৮) ফিরিয়ে এই জুটি ভেঙেছিলেন সাইফউদ্দিন। শেষ ওভারে টাকারকে প্রত্যাশামতো রান নিতে দেননি মোস্তাফিজুর। শেষ বলে রানআউট হয়েছেন তিনি। টাকারের ৩২ বলে ৪১ রানের দায়িত্বশীল ইনিংসে ছিল ৪টি চার। ডকরেলের মতো কার্যকরী ইনিংসে ভূমিকা রাখেন ডেলানি। ৮ বলে ১ ছক্কায় ১০ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। শেষ দিকে বাংলাদেশের বোলাররা ম্যাচে ফেরায় শেষ ৮৪ বলে আসে ৯৫ রান। যার পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা মেহেদীর। ২৫ রানে নেন তিন উইকেট। ৩ ওভারে ১৭ রানে একটি নেন তানজিম হাসান। ৪ ওভারে ৩৯ রানে একটি নেন সাইফউদ্দিন। ১০৩ রানে চতুর্থ উইকেট পতনে চাপে পড়েছিল আয়ারল্যান্ড। কিন্তু সেখান থেকে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ান লরকান টাকার ও জর্জ ডকরেল। পঞ্চম উইকেটে ৪৪ বলে ৫৬ রান যোগ করে বড় স্কোর পাইয়ে দিতে ভূমিকা রাখেন তারা। দলের ১৫৯ রানে ডকরেলকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন সাইফউদ্দিন। ফেরার আগে ২১ বলে ১৮ রান আসে আইরিশ ব্যাটারের ব্যাট থেকে। চতুর্থ উইকেটও এনে দিলেন মেহেদী ঝড়ো ব্যাটিংয়ে দারুণ সূচনা পেয়েছিল আয়ারল্যান্ড। মেহেদী হাসানের এক ওভারে জোড়া আঘাতে ঘটে ছন্দপতন। তাতে ম্যাচে ফেরে বাংলাদেশ। রানের গতিও যায় কমে। তাদের আরও চাপে ফেলতে ১১তম ওভারের শেষ বলে চতুর্থ উইকেটও এনে দেন মেহেদী। নতুন ব্যাটার বেন ক্যালিটজকে (৭) স্টাম্পড করে তুলে নেন নিজের তৃতীয় উইকেট। তাতে আয়ারল্যান্ড ১০৩ রানে হারায় তাদের চতুর্থ উইকেট। এক ওভারে মেহেদীর জোড়া শিকার স্টার্লিং ফিরলেও ঝড়ো ব্যাটিংয়ে আয়ারল্যান্ডের রানের চাকা সচল রাখছিলেন টিম টেক্টর। তার ব্যাটে ৮ ওভারেই স্কোর হয়ে যায় ৮৮! নবম ওভারে এসে প্রথম বলে বিপজ্জনক টিম টেক্টরকে স্টাম্পড করিয়েছেন মেহেদী হাসান। আউটের আগে ২৫ বলে ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ৩৮ রান করেছেন তিনি। আগের ম্যাচে হ্যারি টেক্টর জয়ের মূল নায়ক ছিলেন। এই ম্যাচে অবশ্য তাকে বেশি কিছু করতে দেননি মেহেদী। নবম ওভারের পঞ্চম বলে তাকে অসাধারণ এক ডেলিভারিতে বোল্ড করেছেন। তাতে এক ওভারে মেহেদীর জোড়া শিকারে মুহূর্তেই মোমেন্টাম বদলে যায় সফরকারীদের। ৮৯ রানের মধ্যে আয়ারল্যান্ড হারায় তৃতীয় উইকেট। পাওয়ার প্লেতে আয়ারল্যান্ডের ৭৫ পাওয়ার প্লেতে ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ভালো সংগ্রহ পেয়েছে বাংলাদেশ। ৬ ওভারে এক উইকেটের বিনিময়ে তুলেছে ৭৫ রান। ৫৭ রানের শুরুর জুটি ভাঙে স্টার্লিংয়ের বিদায়ে। স্টার্লিং ফিরলেও অপরপ্রান্তে ঝড়ো ব্যাটিং অব্যাহত রাখেন টিম টেক্টর। ষষ্ঠ ওভারে মোস্তাফিজের বলে একটি চার ও একটি ছয় মেরে এই ওভার থেকে ১৩ রান তুলতে অবদান রাখেন তিনি। ৫৭ রানের ওপেনিং জুটি ভেঙেছেন তানজিম সাকিব টস জিতে ঝড়ো সূচনা পেয়েছে আয়ারল্যান্ড। উদ্বোধনী জুটিতেই পাঁচ ওভারে যোগ করেছে ৫৭ রান। ৪.৪ ওভারে তানজিম সাকিবকে মেরে খেলতে গিয়ে আউট হয়েছেন অধিনায়ক পল স্টার্লিং। আইরিশ ওপেনার ১৪ বলে ৩ চার ও ২ ছক্কায় করেন ২৯ রান। আয়ারল্যান্ড প্রথম উইকেট হারায় ৫৭ রানে। ঘরের মাঠে টানা দ্বিতীয় সিরিজ হার এড়াতে আজ আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচে মাঠে নামছে বাংলাদেশ। এদিন অবশ্য টস ভাগ্য পাশে পায়নি। চট্টগ্রামে শুরুতে টস জিতে ব্যাটিং নিয়েছে আয়ারল্যান্ড। আগের ম্যাচেও টস হেরে ব্যাট করেছিল সফরকারীরা। বাংলাদেশ প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ৩৯ রানে হারায় সিরিজ বাঁচাতে এই ম্যাচ জিততেই হবে তাদের। চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান ক্রিকেট স্টেডিয়ামে গত মাসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ৩–০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে বাংলাদেশ। প্রায় তিন বছর পর ঘরের মাঠে যা ছিল তাদের প্রথম টি–টোয়েন্টি সিরিজ হার। একাদশে কারা সিরিজে সমতা ফেরাতে বেশ কয়েকটি পরিবর্তন এনেছে বাংলাদেশ। বাদ পড়েছেন শরিফুল ইসলাম, জাকের আলী ও রিশাদ হোসেন। তাদের জায়গায় এসেছেন মেহেদী হাসান, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ও নুরুল হাসান সোহান। আয়ারল্যান্ড পরিবর্তন এনেছে একটি। কার্টিস ক্যাম্ফারের বদলে এসেছেন বেন ক্যালিটজ। বাংলাদেশ একাদশ: তানজিদ হাসান তামিম, পারভেজ হোসেন, সাইফ হাসান, লিটন দাস (অধিনায়ক ও উইকেটরক্ষক), তাওহীদ হৃদয়, নুরুল হাসান সোহান, তানজিম হাসান, মেহেদী হাসান, নাসুম আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। আয়ারল্যান্ড একাদশ: পল স্টার্লিং (অধিনায়ক), টিম টেক্টর, হ্যারি টেক্টর, লরকান টাকার (উইকেটরক্ষক), বেন ক্যালিটজ, জর্জ ডকরেল, গ্যারেথ ডেলানি, মার্ক অ্যাডায়ার, ব্যারি ম্যাকার্থি, ম্যাথু হামফ্রিজ ও জশ লিটল।