স্পোর্টস ডেস্ক।।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার তিন ম্যাচ টি-টুয়েন্টি সিরিজের সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচ আজ। সিরিজের প্রথম ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো টি-টুয়েন্টিতে জয়ের দেখা পায় টাইগাররা। ঠিক পরের ম্যাচেই সিরিজে সমতা ফিরিয়ে আনে রোহিত শর্মার দল।
সদ্য জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়া বাংলাদেশী ক্রিকেটার নাঈম শেখ ভারতের বিপক্ষে প্রথম দুই ইনিংসেই দাপুটে ভঙ্গিতে খেলেছেন। অথচ ক্রিকেটে আসার আগে এই ক্রিকেটারের আছে অকৃতকার্য হওয়ার গল্প।
উচ্চ মাধ্যমিকে অকৃতকার্য হলে পত্র ঝড়ার মতো ঝড়ে যায় অনেকে। মোহাম্মদ নাঈম শেখের ক্ষেত্রে হয়েছে তার উল্টো। সাড়ে চার বছর আগে এইচএসসিতে অকৃতকার্য হওয়াতেই নিজের ক্রিকেটীয় প্রতিভাকে বিকশিত করার সুযোগ পেয়েছিলেন। এক ব্যর্থতার পিঠে হতে পেরেছেন সফল একজন ক্রিকেটার।
উচ্চ মাধ্যমিকে ২০১৫ সালে দেওয়া সেই পরীক্ষার পর বুঝতে পেরেছিলেন প্রাতিষ্ঠানিক বিদ্যায় খুব বেশি কিছু করার নেই নাঈমের। তবে ক্রিকেটীয় বিদ্যায় ঠিকই দক্ষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে পেরেছিলেন। সেই দক্ষতাই তার ভাগ্যের দুয়ার খুলে দিয়েছে ক্রিকেটে। তামিমের অনুপস্থিতে ভারতের বিপক্ষে চলমান সিরিজে ওপেনিং করার সুযোগ পেয়ে গেছেন। সুযোগটা বেশ ভালো করেই কাজে লাগিয়েছেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান।
দিল্লি জয়ের ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে অভিষেকে ২৮ বলে করেছেন ২৬ রান। রাজকোটে হেরে যাওয়া ম্যাচটিতেও হেসেছে তার ব্যাট। ৩১ বলে ৫টি চারের সাহায্যে করেছেন ৩৬ রান। তার ইনিংসে ভর করে এক সময় বড় পুঁজির স্বপ্ন দেখছিল বাংলাদেশ। ভারতীয় বোলারদের বিপক্ষে তার এমন সাহসী দুটি ইনিংস নজর কেড়েছে ক্রিকেট বিশ্লেষকদের।
নাঈম জাতীয় দলে খেলার সুযোগটা পেতে পারতেন কয়েকমাস আগেই। জিম্বাবুয়ে-আফগানিস্তানকে নিয়ে ঘরের মাঠে আয়োজিত ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজের শেষ তিন ম্যাচে হুট করে দলে ডাকা হয়েছিল তাকে। সেবার অবশ্য একাদশে স্থান পাননি। বাংলাদেশ ইমার্জিং দলের হয়ে ওপেনিংয়ে ভালো করাতেই নির্বাচকদের নজরে পড়ে গিয়েছিলেন। তার ইতিবাচক মানসিকতার পাশাপাশি সাহসিকতাও মুগ্ধ করে নির্বাচকদের।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার হয়ে ওঠা নাঈমের গল্পটা বেশি দিনের নয়। ২০১৫ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে না পেরে ফরিদপুর জুনিয়র ক্রিকেট কোচিং ক্লাবে ভর্তি হন। ফরিদপুর জেলার হয়ে অনূর্ধ্ব-১৮ ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রান করার পর এক বছর আগে ঢাকা বিভাগের হয়ে খেলে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে চলা নাঈমের।
লম্বায় প্রায় ৬ ফুট দীর্ঘ নাঈম সবশেষ অক্টোবরে 'এ' দলের হয়ে শ্রীলঙ্কা সফরে দুটি হাফসেঞ্চুরি পেয়েছিলেন। ৩৫টি লিস্ট 'এ' ম্যাচ খেলে চারটি সেঞ্চুরি এবং ১১টি হাফসেঞ্চুরি আছে তার। প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছেন ৫টি। ৭টি ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি খেললেও বড় রানের দেখা পাননি এখনও।
তার আগে ২০১৬ সালে চ্যালেঞ্জ কাপে অংশ নিয়ে টুর্নামেন্টের সেরা ব্যাটসম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। এরপর সরাসরি সুযোগ আসে অনূর্ধ্ব-১৯ দলে। সেখানে ভালো খেলার পুরস্কার হিসেবে তিনি নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠিত যুব বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পান।
নাঈম গণমাধ্যমকে নিজের ক্যারিয়ারের গল্প বলতে গিয়ে বলেন, ‘২০১৫ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় আমি অকৃতকার্য হই। ওই সময়টাতে আমি ক্রিকেটের নেশায় বুঁদ হয়ে ছিলাম। এসএসসির পর ক্রিকেট খেললেও পেশাদার ক্রিকেটার ছিলাম না। মূলত এইচএসচিতে অকৃতকার্য হওয়াতেই খেলাটাকে সিরিয়াসলি নেই।’
প্রাতিষ্ঠানিক বিদ্যায় নিজের ব্যর্থতাকে স্বীকার করে নিয়েছেন নাঈম। তবে তার মনোযোগ ছিল শুধু ক্রিকেটে, ‘আসলে আমি কখনোই ভালো ছাত্র ছিলাম না। আমার বন্ধুরা সব ভালো ছাত্র, আমার মনোযোগ সব সময়ই ছিল ক্রিকেট নিয়ে।’
নাঈম শেখ পরীক্ষায় কৃতকার্য হতে পারেননি অলিতে-গলিতে ক্রিকেট খেলার কারণেই! বাবা-মা অবশ্য ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা দেখে পরে আর কিছুই বলেননি। ছেলের পছন্দের কাছেই নতি স্বীকার করেছেন।
পড়াশুনাটা না হলেও ক্রিকেটটা ঠিকই মাথায় ঢুকিয়ে নিয়েছেন নাঈম। উইকেট কিপার না হলেও সব সময়ই স্বপ্ন দেখেন শ্রীলঙ্কান গ্রেট কুমারা সাঙ্গাকারার মতো হওয়ার। এই স্বপ্ন বুকে লালন করেই এখন দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছেন ক্রিকেটের ২২ গজ।






















