নিজস্ব প্রতিবেদক: আলোচিত হত্যাকাণ্ড, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশের (২৩) সন্দেহভাজন হত্যাকারীদের মধ্যে কয়েকজনকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশের একটি সংস্থা।
তাদেরকে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডে তাদের সম্পৃক্ততা এবং হত্যার কারণ জানতে চলছে তথ্য যাচাই-বাছাই। হেফাজতে থাকা এসব ব্যক্তিরা হলেন, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের চনপাড়া বস্তির চিহ্নিত সন্ত্রাসী। তাদের বিরুদ্ধে মাদক-হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধের একাধিক মামলাও রয়েছে।
তবে ত্যাকাণ্ডের মূল কারণ নিয়ে এখনো নিশ্চিত হতে পারেননি তদন্তকারীরা। বেশ কিছু সম্ভাব্য কারণ নিয়ে অগ্রসর হচ্ছেন তারা। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতরা যথেষ্ট সচেতনভাবে লাশ গুমের চেষ্টা করেছে এমন ধারণা তদন্তসংশ্লিষ্টদের।
এদিকে রিমান্ডে থাকা ফারদিন হত্যা মামলার একমাত্র এজাহারনামীয় আসামি আমাতুল্লাহ বুশরার সম্পৃক্ততার কোনো তথ্য পাচ্ছে না ডিবি। তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, রিমান্ডে বুশরা আতঙ্কে মুষড়ে পড়েছেন, ঠিকমতো খাওয়াদাওয়াও করছেন না। শুধু বলছেন, তিনি পরিস্থিতির স্বীকার।
তদন্তসংশ্লিষ্ট একটি সূত্রে জানা গেছে, ফারদিনকে হত্যার পর লাশ শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে দিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আত্মগোপনে চলে গেছে হত্যাকারীরা। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় অবস্থান নিশ্চিত হয়ে তাদের কয়েকজনকে হেফাজতে নিয়েছে তদন্তকারী একটি সংস্থা। তদন্তসংশ্লিষ্ট একটি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
আরেকটি তদন্তকারী সংস্থার দায়িত্বশীল পর্যায় থেকে জানা গেছে, ৪ নভেম্বর রাতে চনপাড়া বস্তির ৪ নম্বর ওয়ার্ডে হত্যা করা হয় ফারদিনকে। ওই এলাকার শাহীন, ফেন্সি রুবেল, কাইলা রায়হান, মাল্টা মনির, সোহাগ ও পলাশকে ঘিরে গড়ে উঠেছে অপরাধজগৎ। যার সদস্য অন্তত ১০০ জন। এদের মধ্যে শাহীন র্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে আর কাইলা রায়হানসহ কয়েকজন একটি সংস্থার হেফাজতে রয়েছে। অন্যরা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আত্মগোপনে চলে গেছে। এসব গ্রুপের মধ্য থেকে কোনো এক বা একাধিক গ্রুপ ফারদিনকে হত্যা করেছে এমন ধারণা তদন্তসংশ্লিষ্টদের।
ফারদিন হত্যা মামলার তদন্তের মূল দায়িত্বে থাকা ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) ফারদিনের চলাচলের পথের অন্তত ৫০০ সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ শুরু করছে। একেবারে শুরু থেকে নতুন করে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত শুরু করেছে। ডিবির দায়িত্বশীল সূত্র থেকে বলা হচ্ছে, তাড়াহুড়ো না করে সময় নিয়ে তদন্ত করা হবে। যেখানে ব্যক্তিগত, নারীঘটিত বা পারিবারিক বিরোধ, ছিনতাই, অপহরণ, মাদকসহ সব বিষয় গুরুত্ব পাবে।
তদন্তসংশ্লিষ্ট ডিবির এক অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) গনমাধ্যমকে জানিয়েছেন, চনপাড়া বস্তিতে কয়েক দফায় অভিযান চালিয়েছি। নারায়ণগঞ্জের ডিবিও সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রেখেছে বস্তি এলাকা। ওই এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অভিযান চলমান আছে।
এদিকে রিমান্ডে থাকা ফারদিন হত্যা মামলার একমাত্র এজাহারনামীয় আসামি আমাতুল্লাহ বুশরার সম্পৃক্ততার কোনো তথ্য পাচ্ছে না ডিবি। তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, রিমান্ডে বুশরা আতঙ্কে মুষড়ে পড়েছেন, ঠিকমতো খাওয়াদাওয়াও করছেন না। শুধু বলছেন, তিনি পরিস্থিতির স্বীকার।
তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিএমপি ডিবিপ্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ‘আমরা সার্বিক বিষয় মাথায় রেখে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছি। কোনো কিছুই আমাদের সন্দেহের বাইরে নেই। এখনো বলার মতো কোনো অগ্রগতি আমাদের নেই। প্রকৃত বিষয় উদঘাটন করতে আরও সময় প্রয়োজন।’ রিমান্ডে থাকা বুশরার সম্পৃক্ততার বিষয়ে এখনো কোনো তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলেও তিনি জানান।
বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন ৪ নভেম্বর থেকে নিখোঁজ ছিলেন। পরদিন রাজধানীর রামপুরা থানায় নিখোঁজের সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তার বাবা কাজী নূরউদ্দিন রানা। ৭ নভেম্বর সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ফারদিনের মরদেহ উদ্ধার করে নৌ-পুলিশ। ৯ নভেম্বর রাতে ফারদিনের বান্ধবী বুশরাসহ অজ্ঞাতদের আসামি করে ‘হত্যা করে লাশ গুম’ করার অভিযোগে রামপুরা থানায় মামলা করেন ফারদিনের বাবা।
আমাদের কাগজ/ইআ






















