নিজস্ব প্রতিবেদক।।
খিলগাঁওয়ের দক্ষিণ বনশ্রীতে ১০ লাখ টাকা যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে নির্মম নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে মো. ওসমান ঢালী (৫০) নামের এক পাষণ্ড স্বামীর বিরুদ্ধে। ওই ঘটনায় ভুক্তভোগী বাদী হয়ে খিলগাঁও থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ সংশোধনী ২০০৩ এর ১১ (গ)/৩০ ধারায় মামলা করেছেন। মামলা নং- ৫২, ২৩ নভেম্বর ২০১৯।
মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গতকাল শনিবার সকালে বিবাদী মো. ওসমান ঢালী (৫০) খিলগাঁও এলাকার দক্ষিণ বনশ্রীর ‘কে’ ব্লকের ১২-নং রোডের ২৮৪-নং বাসায় স্ত্রীর (আঞ্জুমান আরা রেশমা, পিতা- রঙ্গু মোল্লা) (৩৫) কাছে ব্যবসার জন্য ১০ লাখ টাকা দাবি করেন। যৌতুক হিসেবে এ টাকা ভুক্তভোগীর ভাইয়ের কাছ থেকে এনে দিতে চাপ দিতে থাকেন। কিন্তু টাকা আনতে অস্বীকার করায় স্ত্রীর ওপর নির্মম নির্যাতন শুরু করেন স্বামী ওসমান ঢালী। এ সময় তাকে সহযোগিতা করেন বোন সাবিনা (৩০) ও ভাগ্নে জাবেদ (২০)। তারা তাকে রক্তাক্ত জখম করেন। খবর পেয়ে ভুক্তভোগীর ভাই ওই বাসায় এসে বোনকে উদ্ধার করে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন।
ভুক্তভোগীর অভিযোগ, নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানার উত্তর লক্ষণ খোলা এলাকার মৃত আরজ ঢালীর ছেলে মো. ওসমান ঢালীর সঙ্গে ২০০৮ সালে ইসলামি শরিয়া অনুযায়ী তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে যৌতুকের দাবিতে তার ওপর নিয়মিত নির্যাতন করা হয়। কিন্তু একমাত্র সন্তানের (বয়স ১০) কথা চিন্তা করে তিনি বিষয়টি কাউকে জানাননি।
তিনি বলেন, গতকাল শনিবারও ব্যবসার কথা বলে আমার ভাইয়ের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা আনতে বলেন ওসমান ঢালী। কিন্তু টাকা আনতে অপারগতা প্রকাশ করায় আমার ওপর নির্মম নির্যাতন চালানো হয়। ওসমান ঢালী চুলের মুঠো ধরে আমাকে বাসার মেঝেতে ফেলে নির্মমভাবে পেটাতে থাকে। এ সময় ওসমান ঢালীর বোন ও ভাগ্নেও পা দিয়ে আমাকে লাথি মারতে থাকে। একপর্যায়ে ওসমান ঢালী রান্নাঘর থেকে বটি এনে আমাকে কোপ দেয়। বটির কোপ ঠেকাতে গিয়ে আমার বাঁ হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল এবং ডান হাতের অনামিকা রক্তাক্ত জখম হয়। পরে আমার মেয়ে তার মামাকে ফোন দিলে তারা (ভুক্তভোগীর ভাই) আমাকে বাসা থেকে উদ্ধার করে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। চিকিৎসা নিতে সময় লাগায় এজাহার দায়ের করতে বিলম্ব হয় বলেও জানান তিনি।
তিনি আরও জানান, যৌতুকের দাবিতে শুধু তার স্বামী (ওসমান ঢালী) নয়, ওই পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা প্রায়ই তাকে নির্যাতন করত। কিন্তু একমাত্র মেয়ের কথা মাথায় রেখে সকল নির্যাতন নীরবে সয়ে গেছেন। শুধু নির্যাতন নয়, টাকা এনে না দিলে তালাক দিয়ে বাড়িছাড়া করারও হুমকি দেয় ওসমান ঢালী।
ভুক্তভোগীর ভাই (এম. এ. রেজা) বলেন, যৌতুকের দাবিতে এর আগেও আমার বোনের ওপর নির্যাতন চালানো হয়। কিন্তু এবার সীমা অতিক্রম করেছে। আমার বোনের সঙ্গে বিয়ের আগে ওসমান ঢালী আরও একটি বিয়ে করেন। বিষয়টি তারা গোপন করেন। ওই ঘরে তার একটি পুত্র সন্তানও আছে। ওই স্ত্রীর সঙ্গে সংসার করতে এবং বনশ্রীর বাড়িছাড়া করতে আমার বোনের ওপর নির্মম নির্যাতন চালিয়েছে ওসমান ঢালী ও তার পরিবার।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা খিলগাঁও থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) অনিরুদ্ধ রায় বলেন, মামলার প্রধান অভিযুক্ত ওসমান ঢালী (৫০) গতকাল রাতেই গ্রেফতার হয়েছেন। আজ (রোববার) দুপুরে মহানগর হাকিমের আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে, অন্য আসামিদের গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে।






















