অর্থ ও বাণিজ্য ১৭ নভেম্বর, ২০২২ ০৪:১৬

জীবনবীমায় চাঙা ঘুমন্ত পুঁজিবাজার

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার আশঙ্কার মধ্যে দেশের অর্থনীতি নিয়ে নানা গুজব-গুঞ্জনে ঘুমিয়ে থাকা পুঁজিবাজারে আরও একটি হতাশার লেনদেন দেখল বিনিয়োগকারীরা। ৩৯০টি কোম্পানির মধ্যে এক কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে কেবল ৬৩টি কোম্পানিতে।

সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ বা ডিএসইতে ৭৭টি কোম্পানির একটি শেয়ারও হাতবদল হয়নি। ১২৪টি কোম্পানির এক থেকে এক হাজারটি শেয়ার লেনদেন হয়েছে।

এদিন দর বেড়েছে ৪৭টি কোম্পানির, কমেছে ৪২টির। আর ফ্লোর প্রাইসে আগের দিনের দরে হাতবদল হয়ে ২২৪টি কোম্পানির শেয়ার। এই ২২৪ কোম্পানি মিলিয়ে লেনদেন হয়েছে কেবল ৩৬ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে নতুন তালিকাভুক্ত গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকেই হাতবদল হয়েছে ১৮ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। বাকি ২২৩ কোম্পানি মিলিয়ে কেবল ১৭ কোটি ৪২ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে।

ডিএসইসির সার্বিক সূচক ডিএসইএক্স টানা দ্বিতীয় দিন বাড়লেও সপ্তাহের প্রথম তিন দিন যতটা কমেছে, গোটা সপ্তাহে কমেছে ৮৮ পয়েন্ট।

১২ পয়েন্ট সূচক বৃদ্ধির দিন বাজারের হঠাৎ করেই জীবনবিমার শেয়ার দরে লাফ দেখা গেছে। এই খাতের ১৩টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ১১টির, কমেছে একটির। বাকি একটি আগের দিনের দরে লেনদেন হয়েছে।

দরবৃদ্ধির হারও ছিল আকর্ষণীয়। সবচেয়ে বেশি দরবৃদ্ধি পাওয়া ১০টি কোম্পানির মধ্যে ছয়টিই এই খাতের। এর মধ্যে শীর্ষে থাকা দুই কোম্পানি চার্টার্ড লাইফ পদ্মা লাইফের দর বেড়েছে সর্বোচ্চ সীমা ১০ শতাংশের কাছাকাছি।

ছাড়া সোনালী লাইফের .৯৯ শতাংশ, পপুলার লাইফের .০৯ শতাংশ, ফারইস্ট লাইফের .৯৭ শতাংশ, রূপালী লাইফের শেয়ারের .৫৯ শতাংশ দর বেড়েছে।

সাধারণ বিমা খাতেও আগ্রহ দেখা গেছে কিছুটা। এই খাতে চারটির দরপতনের বিপরীতে বেড়েছে ১৫টি কোম্পানির দর। বাকি ২৪টি আগের দিনের দরে ফ্লোর প্রাইসে লেনদেন হয়েছে।

এদিন এক কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে কেবল তথ্যপ্রযুক্তি খাতে, যার মধ্যে সাম্প্রতিক হার্টথ্রব জেনেক্স ইনফোসিসেই লেনদেন হয়েছে ৬৩ কোটি টাকা।

তবে এদিন ব্যাংক খাতের তৃতীয় স্থানে উঠে ৮২ কোটি টাকা লেনদেন হওয়াকে একটি বিশেষ প্রবণতা বলাই যায়। প্রতি বছর দারুণ লভ্যাংশ দিয়ে আসা কোম্পানিগুলো অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেও ব্যবসা খুব একটা খারাপ করেনি, সেটি তাদের প্রান্তিক প্রতিবেদনেই স্পষ্ট। তারপরেও এই খাতের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ নেই বললেই চলে।

বুধবার পুঁজিবাজারে লেনদেন শুরুর পরপরই গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারদর ১০ শতাংশ পড়ে যাওয়ার মতো বিস্ময়কর উদাহরণও তৈরি হয়েছে পুঁজিবাজারে।

এর ভিড়ে হঠাৎ করেই এই খাতের বেশ কিছু কোম্পানির উল্লেখযোগসংখ্যক শেয়ার হাতবদল হয়েছে, যার মধ্যে শীর্ষে ছিল নতুন তালিকাভুক্ত কোম্পানিটি। ছাড়া আইএফআইসি, ওয়ান, প্রিমিয়ারসহ কয়েকটি ব্যাংকের বেশ কিছু শেয়ার হাতবদল হয়েছে। তবে যত শেয়ারের বিক্রেতা ছিল, তত ক্রেতা ছিল না কোনোটিরই।

তবে আগ্রহ বাড়লেও কেবল ৫টি কোম্পানির দর বেড়েছে। দুটির দরপতন হয়েছে। আর আগের দিনের দরে হাতবদল হয়েছে ৩০টি, যেগুলো ফ্লোর প্রাইসে রয়েছে।

ডিএসইর লেনদেন এদিন আগের দিনের তুলনায় খুব বেশি বেড়েছে তেমন নয়। হাতবদল হয়েছে ৫৫২ কোটি ১৩ লাখ ৭২ হাজার টাকা, যা আগের দিন ছিল ৪৬৮ কোটি ৫১ লাখ ৫৬ হাজার টাকা।

সে হিসাবে লেনদেন বেড়েছে ৮৩ কোটি ৬২ লাখ ১৬ হাজার টাকা।

লম্বা সময় ধরে প্রথম স্থানটা দখলে রেখেছে প্রযুক্তি খাত। ৫টি বা ৬২ দশমিক ৫০ শতাংশ কোম্পানির দরবৃদ্ধির সঙ্গে হাতবদল হয়েছে ১০৬ কোটি ৮৪ লাখ টাকা, যা লেনদেনের ১৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ। বিপরীতে ২টি কোম্পানির দরপতন একটির লেনদেন হয়েছে আগের দরে।

৯৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা বা ১৬ দশমিক ৪০ শতাংশ লেনদেন করে দ্বিতীয় স্থানে থাকা ওষুধ রসায়ন খাতে ফ্লোর প্রাইসে লেনদেনের সংখ্যা বেশি ছিল।

৪টি কোম্পানির দর বৃদ্ধির বিপরীতে ১৫টির লেনদেন হয়েছে আগের দরে, যার প্রায় সবগুলোই ফ্লোর প্রাইসে গড়াগড়ি খাচ্ছে। ৩টির দরপতন হয়েছে।

চতুর্থ সর্বোচ্চ ৪৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা হাতবদল হয়েছে জীবনবিমা খাতে।

৪২ কোটি ৪০ লাখ টাকা লেনদেন করে পঞ্চম অবস্থানে থাকলেও কাগজ মুদ্রণ খাতে কোনো কোম্পানির শেয়ারের দরবৃদ্ধি হয়নি। দুটির আগের দরে তিনটির দরপতনে লেনদেন শেষ হয়েছে।

সাধারণ বিমা খাতে হাতবদল হয়েছে ২৬ কোটি লাখ টাকার, যা আগের দিন ছিল ১৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা।

 

 

 

আমাদের কাগজ/টিআর