আইন ও আদালত ২০ জুলাই, ২০২৩ ০৬:২৯

ডাকাতি করতে গিয়ে শ্বশুরকে গুলি করে হত্যা: ২৩ বছর পর জামাইসহ আটজনের মৃত্যুদণ্ড

কক্সবাজার প্রতিনিধি: কক্সবাজারে ডাকাতি করতে গিয়ে প্রবাসফেরত শ্বশুরকে গুলি করে হত্যার দায়ে জামাইসহ আটজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। ঘটনার ২৩ বছর পর বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) দুপুরে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-৪ মোশাররফ হোসেন এ রায় ঘোষণা করেন। একইসঙ্গে প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আগে দুই বছর সশ্রম কারাদণ্ড ভোগের নির্দেশনা দিয়েছেন আদালত।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শওকত বেলাল।

তিনি বলেন, একটি ডাকাতিসহ হত্যা মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় বিজ্ঞ আদালত এ রায় দেন।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন, কক্সবাজার শহরের টেকনাইফ্যা পাহাড় এলাকার মুহাম্মদ হাছানের ছেলে ও ভিকটিমের জামাই মনজুর হোসেন, মৃত মুহাম্মদ কাছিম প্রকাশ কালাজুরীর ছেলে মুহাম্মদ আলম, পাহাড়তলী এলাকার মোহাম্মদ সৈয়দের ছেলে শহর মুল্লুক কালু, দক্ষিণ রুমালিয়ারছড়া এলাকার এখলাছ মিয়ার ছেলে আনোয়ার হোসেন প্রকাশ কালুইন্যা, ভোলা চরফ্যাশন থানার নুরাবাদ এলাকার খোরশেদ আলমের ছেলে জসিম উদ্দিন (বর্তমানে কক্সবাজার শহরের উত্তর রুমালিয়ার ছড়ায় বসবাসকারী), পাহাড়তলী এলাকার আব্দুর শুক্করের ছেলে মোস্তাক, টেকনাইফ্যা পাহাড় এলাকার আমির হোছেনের ছেলে আক্তার কামাল এবং সিটি কলেজ এলাকার গুরা মিয়ার ছেলে আমির হোছেন।

খালাসপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন, ওয়াহিদ মুরাদ, দিদারুল আলম দিদার, আবুল কালাম বরমাইয়া, আমিন, নুর মোহাম্মদ, রিয়াদ প্রকাশ দেলোয়ার প্রকাশ দুধুইয়া, শফিক প্রকাশ শফিক্কা, বকতিয়ার, আবদুর রহিম ও শফি। রায় ঘোষণার সময় দণ্ডপ্রাপ্ত ও খালাসপ্রাপ্ত সবাই পলাতক ছিলেন।

আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) অ্যাডভোকেট শওকত বেলাল মামলার বরাতে বলেন, ২০০০ সালের ১৫ জুন কক্সবাজার শহরের রুমালিয়ারছড়ার বাঁচামিয়ারঘোণা এলাকার প্রবাসী মোহাম্মদ হোসেনের বাড়িতে তার মেয়ের জামাই মনজুর আলমের নেতৃত্বে দুর্বৃত্তরা ডাকাতির উদ্দেশ্যে দরজা ভেঙে প্রবেশ করে। এ সময় তারা মোহাম্মদ হোসেনের মাথায় গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। পরে ডাকাত দল বাড়িতে ব্যাপক লুটপাট চালায়।

এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী ছবুরা খাতুন বাদী হয়ে মনজুর আলমকে একমাত্র আসামি করে কক্সবাজার থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় অজ্ঞাত আসামি করা হয় আরও ১৮-২০ জনকে। দীর্ঘ তদন্ত শেষে ১৯ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।

২০০৬ সালে ২৫ এপ্রিল মামলার চার্জ গঠন করে মামলার বাদী ও তদন্ত কর্মকর্তাসহ মোট ৯ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করে আদালত। দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে ৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণীত হওয়ায় তাদের মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করেন বিচারক।

এ রায় ঘোষণার মধ্য দিয়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হয়েছে উল্লেখ করে আইনজীবী বেলাল আরও বলেন, রায়ে বাদীপক্ষ সন্তুষ্ট।

তবে এ রায়ে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন আসামি পক্ষের আইনজীবীরা। তারা রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাবেন বলে উল্লেখ করেন।

এদিকে একই মামলায় আনোয়ার হোসেন নামে অপর এক আসামিকে ডাকাতির টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড ও অনাদায়ে আরও ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে। চার্জশিটে থাকা মামলার অপর ১০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত।

 

আমাদেরকাগজ/এইচএম