কৃষি ২ ডিসেম্বর, ২০২০ ১০:৪৭

পানিফল চাষে সচ্ছল ৩ শতাধিক পরিবার

জামালপুর প্রতিনিধি

সারা দেশে পানিফল নামে পরিচিত হলেও সিংগারার মত দেখতে হবার কারণে অনেকে এই ফলকে সিংগারা ফলও নামে চিনে। নানা জায়গায় এর নানান নাম। ওয়াটার কালট্রপ, বাফেলো নাট, ডেভিল পড ইত্যাদি। আবার ইংরাজিতে একে ওয়াটার চেস্টনাটও বলা হয়। এরও বৈজ্ঞানিক নাম ‘ট্রাপা নাটানস’।

জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ ও ইসলামপুর উপজেলায় এই পানিফলের চাষ ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। খরচ কম লাভ বেশি হওয়ায় এ ফল চাষে আগ্রহী হচ্ছে কৃষকেরা। তিন থেকে সাড়ে তিন মাসের মধ্যে ফল আসে গাছে। এ ফল চাষে প্রয়োজন হয়না সার-কীটনাশকের। প্রতি বিঘায় মাত্র তিন-চার হাজার টাকা খরচেই ২৫-৩০ হাজার টাকা লাভ করা সম্ভব। দেওয়ানগঞ্জ ও ইসলামপুরের তিন শতাধিক কৃষক পতিত ৭৪ হেক্টর জমিতে চাষ করছে এই পানিফল। স্থানীয় বাজারে প্রতি কেজি পানিফল বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকায়।

kk

পানিফল চাষ করে সাবলম্বী হয়ে উঠছে এই অঞ্চলের অনেক হতদরিদ্র মানুষ। অল্পপুঁজি ব্যয় করে পানিফল চাষের মাধ্যমে দু’পয়সা বাড়তি আয় করে অভাবের সংসারে সচ্ছলতা এনেছে প্রায় তিন শতাধিক পরিবার।

আবুল হাসেম, মোস্তাক আলী, দানেছ আলী, মির্জা বদি উজ্জামান, বিপ্লব আলী, তারা মিয়াসহ পানিফল চাষিরা জানান, সরকারি-বেসরকারি খাত থেকে ঋণ সহায়তা পেলে আরও অনেক মানুষ পানিফল চাষ করবে। এতে একদিকে নিজেরা যেমন স্বাবলম্বী হতে পারে তেমনি গ্রামীণ অর্থনীতিতেও অবদান রাখা সম্ভব হবে।

ll

পানি ফলের গুনাগুণ: যেকোনো মৌসুমি ফলই উপকারি। ঠিক একইভাবে উপকারি পানিফল। খাদ্য ও পুষ্টিগুণে এটি মহৌষধ। পানিফলের প্রতি ১০০ গ্রাম খাদ্য যোগ্য অংশ অর্থাৎ খোলা ছাড়িয়ে মোট শাঁসের পরিমাণ ১০০ গ্রাম হলে তাতে পাওয়া যায় –

১) খাদ্যশক্তি রয়েছে ৬৫ কিলো ক্যালোরি
২) জলের পরিমাণ ৮৪.৯ গ্রাম
৩) খনিজ পদার্থ– ০.৯ গ্রাম
৪) খাদ্য আঁশ– ১.৬ গ্রাম
৫) আমিষ– ২.৫ গ্রাম
৬) শর্করা– ১১.৭ গ্রাম
৭) ক্যালসিয়াম– ১০ মিলিগ্রাম
৮) আয়রন– ০.৮ মিলিগ্রাম
৯) ভিটামিন বি১ – ০.১৮ মিলিগ্রাম
১০) ভিটামিন বি২ – ০.০৫ গ্রাম
১১) ভিটামিন সি – ১৫ মিলিগ্রাম
১২) এক একটি পানি ফলে চর্বির পরিমাণ – ০.৯ গ্রাম
১৩) এছাড়াও আছে পটাশিয়াম, জিঙ্ক, ভিটামিন-ই। রয়েছে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান।

পানিফলের ঔষধি গুণ বা উপকারিতা কি?

১. পানিফল শরীরের পুষ্টির অভাব দূর করে।
২. পানিফল পেটের রোগ নিরাময় করে।
৩. ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে করতে সাহায্য করে।
৪. দুর্বল শরীরকে বল দেয়।
৫. হাত-পা ফোলা ঠিক করে।
৬. এটি যকৃতের প্রদাহনাশক অর্থাৎ লিভারের ইনফ্লামেশন নিরাময় করে।
৭. এটি যৌন শক্তিবর্ধক একটি ফল।
৮. ঋতুর আধিক্যজনিত সমস্যা ঠিক করতে খুবই উপকারি।
৯. এমনকি এতে রয়েছে ক্যানসার প্রতিরোধের গুণও।
১০. শরীর ঠাণ্ডা করতে পানিফলের জুড়ি নেই।
১১. শরীর থেকে টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে।
১২. বমিভাব, হজমের সমস্যা দূর করতে পানিফলের কোনো তুলনা হয় না।
১৩. অনিদ্রা দূর করতে কাজে দেয়।
১৪. ঠাণ্ডা লাগা, সর্দি থেকে স্বস্তি পেতে সাহায্য করে পানিফল।
১৫. ব্রঙ্কাইটিস, অ্যানিমিয়া কমাতে পারে।
১৬. পানিফলের শাঁস শুকিয়ে রুটি বানিয়ে খেলে অ্যালার্জি দূর হয়।
১৬. পিত্তজনিত রোগ নাশ করে।
১৭. রক্ত আমাশা বন্ধ করে।
১৮. প্রসাবের সমস্যা দূর করে।