ডেস্ক রিপোর্ট
রাজধানীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন সুমন আহমেদ (৩০)। কৃষির প্রতি প্রবল আগ্রহ থেকেই শুরু করেছেন ‘দুর্লভ’ কিছু সবজির চাষ।
মাদারীপুর জেলার শিবচরের রাজারচরের মাদবরকান্দি এলাকায় নিজ জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে চাষাবাদ শুরু করেন সুমন। প্রথমবারেই তিনি সফলতার মুখ দেখেন। সেই আগ্রহ থেকেই কিছু পরিমাণ জমি বছর চুক্তিতে ভাড়া নিয়ে শুরু করেছেন নানান জাতের সবজির চাষাবাদ।
‘কৃষি বায়স্কোপ’ নামে চুয়াডাঙ্গার একটি সংগঠন থেকে নানা জাতের সবজি চাষ নিয়ে প্রশিক্ষণ আর পরামর্শ নিয়ে নিজের গ্রামে শুরু করেন চাষাবাদ।
আধুনিক পদ্ধতিতে প্রস্তুতকৃত জমিতে প্রচুর পরিমাণে স্কোয়াশের আবাদ করেছেন তিনি। একই জমিতে ব্রকোলি আর রেড ক্যাভেজও রয়েছে। সাথে আছে বেগুন আর ক্যাপসিকামও।
বর্তমানে জমি থেকে স্কোয়াশ আর ব্রকোলি তুলছেন বিক্রির জন্য। পাশাপাশি চলছে অন্য সবজি গাছের পরিচর্যা। ইতোমধ্যে ৭ হাজার কেজি স্কোয়াশ আর ২৫০ পিস ব্রকোলি পাইকারি বাজারে বিক্রি করেছেন। এছাড়াও সবজি কিনতে বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেকেই তার খামারে আসেন।
সবজির ক্ষেত ঘুরে দেখা গেছে, ক্ষেতের বিভিন্ন স্থানের মোট ৮৪ শতাংশ জমিতে ব্রকোলি, স্কোয়াশ, ক্যাপসিকাম, রেড ক্যাভেজ, উছতা, রকমেলন, পারপেল কিং জাতের বেগুন চাষ করেছেন তিনি। জমির মধ্যে নির্দিষ্ট দূরত্বে পোকা দমনের জন্য ‘সেক্সরেমন ফাঁদ’ তৈরি করা হয়েছে। এছাড়াও মাটির আদ্রতা ধরে রাখার জন্য জমিতে পলিথিনের শিট বিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। ভিন্ন ভিন্ন জমিতে প্রচুর পরিমাণে সবজির ফলন হয়েছে।
সুমন আহমেদ জানান, প্রথমে ভাড়া নেওয়া ত্রিশ শতাংশ জমিতে চাষ করেন ব্রকোলি, স্কোয়াশ, রেড ক্যাভেজ আর বেগুন। আবাদ শুরুর পর গত তিন মাসেই তার খামারে স্কোয়াশ, ব্রকোলি আর বেগুনের ব্যাপক ফলন এসেছে।
তিনি আরো জানান, বগুড়া থেকে এসব সবজির চারা নিয়ে আসা হয়েছে। সঠিকভাবে নিয়ম মেনে পরিচর্যা করার ফলে ভালো ফলন এসেছে গাছগুলোতে। চাকরির কারণে সপ্তাহে শুক্র ও শনিবার বাড়িতে এসে সময় দিচ্ছেন খামারে। এছাড়াও তার সঙ্গে স্থানীয় নূরুল ইসলাম ও শোয়েব মাহমুদ নামে আরো দুই যুবক রয়েছেন যারা নিয়মিত দেখাশোনা করছেন খামার।
তরুণ এই উদ্যোক্তা জানিয়েছেন, নিজে কিছু করার স্বপ্ন নিয়ে কৃষিকাজ শুরু করেছেন তারা। নিজস্ব ও ভাড়া করা জমিতে বড় পরিসরে সবজির খামার করার স্বপ্ন নিয়ে প্রাথমিক অগ্রযাত্রা তাদের। পরীক্ষামূলক চাষাবাদে তারা যেসব সবজির চাষ করেছেন তার সবকটিতেই আশাতীত ফলন এসেছে। ইতোমধ্যে স্থানীয় পাইকারি বাজারে ১৫ থেকে ২০ টাকা কেজিতে বিক্রি করেছেন ৭ হাজার স্কোয়াশ আর ২০ থেকে ২৫ টাকা পিস হিসেবে ২৫০ পিস ব্রকোলি বিক্রি করেছেন। ত্রিশ শতাংশ জমিতে চাষাবাদের শুরু থেকে ফলন আসা পর্যন্ত প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে তার। হিসেব অনুযায়ী এই ফলনেই তিনি অনেক লাভবান হয়েছেন।
তরুণ কৃষক সুমন বলেন, ছোটবেলা থেকেই কৃষির প্রতি প্রবল আগ্রহ ছিল আমার। লেখাপড়া শেষ করে ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছি। তবে মন পড়ে আছে সবুজে ঘেরা নিজের জন্মস্থানে। সেখানেই ফিরে আসতে হবে। এমন অনুভূতি থেকেই আধুনিক চাষাবাদ নিয়ে জানার চেষ্টা করি। খোঁজ পাই কৃষি বায়োস্কোপ নামের একটি সংগঠনের। সেখানে জুবায়ের স্যারের কাছে থেকে পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ পাই। গ্রামে এসে শুরু করি চাষাবাদের কার্যক্রম। প্রথমে ত্রিশ শতাংশ জমিতে চাষ শুরু করি। এবং মাস দুয়েকের মধ্যেই আরো বেশ কিছু জমিতে চাষাবাদ করি। আসলে পরীক্ষামূলকভাবে শুরু করলেও ফলন দেখে আমি আশাবাদী।
সুমন আরো বলেন, চাষের পদ্ধতি সম্পর্কেও ধারণা এসেছে। প্রতিনিয়ত শিখছি। আশাকরি আগামীতে আরো ভালো ফলন হবে। স্বপ্ন পূরণ হবে আমি ও আমার সহযোগীদের।
সঠিকভাবে পরিশ্রমের মাধ্যমে সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে উপরে ওঠা সম্ভব। আর গ্রামের জমিতে সোনার ফসল ফলানোর যে আভিধানিক কথা তাও অসম্ভব কিছু নয়। প্রত্যন্ত গ্রামে বিদেশি সবজি চাষে সফলতার দৃঢ় সংকল্প নিয়ে কাজ শুরু করা সুমনের প্রত্যাশা গ্রামের যুবকেরাও তার মতো আধুনিক চাষাবাদে এগিয়ে আসবে। স্বাবলম্বী হবে নিজে।