আমাদের কাগজ রিপোর্ট: কথায় আছে নিজের হাতে গড়ি ভবিষ্যৎ, তবে এ কথার বিপরীত পথে হেটেছেন মিরাজুল। সংসারের হাল ধরতে দুটো পা আর আত্মবিশ্বাসই ভরসা। পা দিয়েই ক্যামেরা ধরে তিনি আজ সফল ইউটিউবার। মাসে রোজগার প্রায় অর্ধলাখ টাকা। দুই হাত নেই তার। কিন্তু, কোনদিন প্রতিবন্ধকতার সামনে মাথা নোয়ায়নি মিরাজুল ইসলাম (২২)।
মিরাজুলের বাড়ি ওপার বাংলার পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের যাত্রাপুর গ্রামে। তিনি জানান, জন্ম থেকেই তার দুটি হাত নেই। কিন্তু, জীবনযুদ্ধে কখনও ভয় পাননি তিনি। পা দিয়েই শুরু করেন লেখা। পড়াশোনার জন্য স্কুলে ভর্তি হতে প্রথমে বিস্তর বেগ পেতে হয়েছিল। পরে তিনি প্রাথমিক, উচ্চপ্রাথমিকের গন্ডি পার হন। মিরাজুল কিন্তু এতেই থেমে থাকতে রাজি হননি। তিনি চেয়েছিলেন সামনের দিকে এগিয়ে যেতে। আর সেই লক্ষ্যেই অর্থনীতিতে স্নাতক স্তরে ভর্তি হন।
এদিকে তার অনটনের সংসার। বাবা তোরাব আলী চাষাবাদ করেন। মা প্রয়াত। তিন ভাইবোনের মধ্যে মিরাজুল সবথেকে ছোট হলেও সংসারের অনেকটা দায়িত্ব তিনি নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন। অর্থ উপার্জনের জন্য তিনি ব্যবহার করছেন ইউটিউব। দুই পা ব্যবহার করেই ইউটিউব ও ফেসবুকে বিভিন্ন ভিডিয়ো পোস্ট করেন তিনি। আর তা থেকে উপার্জনও করেন। সেই অর্থটা বাংলাদেশি মুদ্রায় হাফ লাখের কাছাকাছি। পড়াশোনার পাশাপাশি সংসারের হাল ধরার জন্যই তাঁর এই পদক্ষেপ। এদিকে ইতিমধ্যেই বিয়েও করেছেন তিনি। তাঁর স্ত্রী সুমাইয়া আক্তার ওপার বাংলার সংবাদ মাধ্যম 'প্রথম আলো'-কে বলেন, "স্বামী হিসেবে ও অত্যন্ত ভালো। সব কাজে আমাকে অত্যন্ত সাহায্য করে, সংসারে সময় দেয়। মিরাজুল খুব ভালো রান্নাও করতে পারে।" তাঁদের একটি সন্তানও রয়েছে।
অন্যদিকে, সংসার চালানোর পাশাপাশি অনাথ শিশুদের দায়িত্বও তিনি তুলে নিজেছেন নিজের কাঁধে। ডিজিটাল মিডিয়া থেকে তিনি যা আয় করেন তারই একটি অংশ ব্যয় করে তার গ্রামে অনাথ শিশুদের জন্য একটি আশ্রম গড়ে তুলেছেন। মিরাজুল জানান, তার হাত নেই সেই জন্য দুঃখ না করে জীবনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য পথ দেখিয়েছেন তার মা। পা দিয়ে মাটিতে লেখা অভ্যাস করতেন তিনি। এরপর তার ধীরে ধীরে আলোর পথে হাঁটা। ভবিষ্যতে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াতে চান মিরাজুল।
আমাদের কাগজ/টিআর