আমাদের কাগজ রিপোর্ট: কথায় আছে েশেষ হইয়াও হইল না শেষ। এমনই পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হচ্ছে পদ্মা সেতু প্রকল্পে। খরচ বাড়ছে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের, সেই সঙ্গে বাড়ছে সময়ও। সময় ও ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে সেতু বিভাগ। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ ‘ডিফেক্ট লায়াবিলিটি’র নামে এসব কাজ সম্পন্ন করার মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। সংস্থাটি নতুন করে ২ হাজার ৬৮২ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাবও দিয়েছে। এর ফলে যে পদ্মা সেতু নির্মাণের ব্যয় ছিল মাত্র ১০ হাজার ১৬১ কোটি টাকা, তা বেড়ে দাঁড়াবে ৩২ হাজার ৮৭৫ কোটি টাকা।
ডলারের দাম বৃদ্ধি, পাইল ফাউন্ডেশনের নকশা পরিবর্তন, ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর) ও আয়কর বৃদ্ধি, ৪০০ কেভি (কিলোভোল্ট) ট্রান্সমিশন টাওয়ার ফাউন্ডেশন প্ল্যাটফর্মের নকশার জন্য বৃদ্ধিপ্রাপ্ত খরচ বাড়ছে। এজন্য সদ্য সমাপ্ত হওয়া প্রকল্পে আরও ২ হাজার ৬৮২ কোটি টাকা চেয়েছে সেতু বিভাগ। এছাড়া এ অর্থ সংশ্লিষ্ট খাতে খরচের জন্য আরও এক বছর সময় বৃদ্ধির প্রয়োজন। ফলে সদ্য সমাপ্ত হওয়া পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের সময় ও ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে সেতু বিভাগ।
পরিকল্পনা কমিশন জানায়, মাওয়া নদীর প্রশিক্ষণ কাজের নকশা পরিবর্তন, অপারেশন ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য অতিরিক্ত কাজ ও অন্যান্য সিভিল কাজ এবং সেতু উদ্বোধনের অনুষ্ঠান ইত্যাদির জন্য অতিরিক্ত অর্থ ও সময় প্রয়োজন।
এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের প্রধান (অতিরিক্ত সচিব) ইস্রাত জাহান তস্লিম বলেন, ‘সেতু বিভাগ পদ্মা সেতু প্রকল্পের ব্যয় ও সময় বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে। তাদের প্রস্তাবনা নিয়ে সভা হবে। প্রকল্পের আরও কিছু কাজ বাকি আছে। কাজের পরিমাণ সবসময় এদিক-ওদিক হয়। দেখা যায়, ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) নেওয়ার সময় এক ধরনের চিন্তা মাথায় থাকে। প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় আর পরিকল্পনা মেলে না। সেতু যেহেতু সমাপ্ত হয়েছে, বাকি কাজগুলোও সমাপ্ত করতে হবে। কাজগুলো বাস্তবায়ন করতে গিয়ে সময়েরও প্রয়োজন হবে।’
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, প্রকল্পের ব্যয় এখন বেড়ে দাঁড়াবে ৩২ হাজার ৮৭৫ কোটি ৫৪ লাখ কোটি টাকা। সর্বশেষ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। নতুন করে প্রকল্পের ব্যয় বাড়ছে মূলত সমাপ্ত হওয়া কাজের বিল পরিশোধের জন্য। ২০২৩ সালের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও নতুন প্রস্তাবে আরও এক বছর মেয়াদ বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে।
সেতু বিভাগ জানায়, মাটি নরম থাকায় ৪১টি পিয়ারের মধ্যে ২২টির পাইল ফাউন্ডেশন নতুন করে ডিজাইন করতে হয়েছে। ৪০০ কেভি ট্রান্সমিশন টাওয়ার ফাউন্ডেশন প্ল্যাটফর্মের নকশার কারণেও খরচ বেড়েছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঞ্চালন লাইন পদ্মা নদীর ওপর দিয়ে যাচ্ছে। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ এ সঞ্চালন লাইনের মূল কাজ করলেও পিয়ারগুলো স্থাপন করা হয়েছে পদ্মা সেতু প্রকল্পের অংশ হিসেবে। সরকার বিভিন্ন সময়ে ভ্যাট ও আয়কর বৃদ্ধি করেছে। বিদেশি ঠিকাদারদের ক্ষেত্রে ভ্যাট এবং আয়কর সাড়ে ১০ থেকে বেড়ে ১৫ শতাংশ হয়েছে। মূল সেতুর জন্য অতিরিক্ত ভ্যাট ও আয়কর বাবদ খরচ হয়েছে ৪০৫ কোটি টাকা এবং নদী প্রশিক্ষণের জন্য ২৮২ কোটি টাকা।
এছাড়া প্রকল্প সমাপ্তির সময় বাড়ার কারণে কনস্ট্রাকশন সুপারভিশন কনসালট্যান্ট-২ এর চুক্তিমূল্য দাঁড়ায় ৯৫৭ কোটি ১৫ লাখ টাকা।
সংশোধিত প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, কাজ শেষ করতে দেরি হওয়ায় প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে। মূল সেতুর কাজ শেষ করতে অতিরিক্ত ৪৩ মাস এবং নদী প্রশিক্ষণের কাজ শেষ করতে ৫৫ মাস লাগবে, এতে বাড়ছে খরচ ও প্রকল্প সমাপ্তির সময়।
মাওয়া প্রান্তে সড়ক ও কালভার্ট সম্প্রসারণে অতিরিক্ত ১৯ কোটি টাকা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কিছু অতিরিক্ত কাজ করা হয়েছে, এজন্য অতিরিক্ত তহবিল প্রয়োজন বলে উল্লেখ করা হয়েছে সংশোধিত প্রস্তাবে।
প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধির অন্যান্য কাজের মধ্যে রয়েছে- অপারেশন ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য যন্ত্রপাতি সরবরাহ, অপটিক ফাইবার ক্যাবল স্থাপন, টোল প্লাজার উভয় পাশের আইল্যান্ড সম্প্রসারণ, প্রস্তাবিত বাস-বে এবং ডেডিকেটেড ট্রাক লেন, সেতুর নিরাপত্তার জন্য প্রস্তাবিত আনসার ব্যারাক এবং অ্যাপ্রোচ রোড থেকে জাজিরা পর্যন্ত লাইন রোড নির্মাণ।
২০০৭ সালে ১০ হাজার ১৬১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প একনেক সভায় অনুমোদন পায়। পরে নকশা পরিবর্তন হয়ে দৈর্ঘ্য বেড়ে যাওয়ায় নির্মাণ ব্যয়ও বাড়ে। ২০১১ সালে ২০ হাজার ৫০৭ কোটি ২০ লাখ টাকার সংশোধিত প্রকল্প একনেকে অনুমোদন পায়। ২০১৬ সালে আরও আট হাজার ২৮৬ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ালে মোট ব্যয় দাঁড়ায় ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। সবশেষ প্রকল্পের মোট ব্যয় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৮ লাখ ৭৬ হাজার টাকায় দাঁড়িয়েছে। এর পুরো টাকাই সরকারি অর্থায়ন। নতুন করে যে অর্থ বাড়ছে তাও সরকারি কোষাগার থেকে মেটোনো হবে।
আমদের কাগজ/টিআর