সেতু বিভাগের তথ্যমতে, ১১ দশমিক ৫ কিলোমিটার উড়াল সড়কে র্যাম্প ১১ কিলোমিটার। বিমানবন্দর কাওলা থেকে মোট ১৫টি র্যাম্প নির্মিত হচ্ছে। এর মধ্যে ১৩টি খুলে দেওয়া হবে। বনানী ও মহাখালী র্যাম্প এখনো পুরোপুরি প্রস্তুত নয়। আপাতত র্যাম্প দুটি খুলছে না। প্রকল্পের সার্বিক কাজের অগ্রগতি ৬৫ শতাংশ। তেজগাঁও পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি শতভাগ।
সরেজমিনে ফার্মগেট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মনোয়ারা পার্ক ঘেঁষে নেমে এসেছে একটি মসৃণ সড়ক। দেখলে মনে হবে কোনো ফ্লাইওভার মিশে গেছে সড়কে। কয়েকজন শ্রমিক সেই সড়কে কাজ করছেন। এটা মূলত ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের র্যাম্প। এই র্যাম্পটি মেট্রোরেল ঘেঁষে নির্মিত। কোনো যাত্রী মেট্রোরেল ভ্রমণ শেষে র্যাম্পের মাধ্যমে ফার্মগেট থেকে দ্রুতসময়ে পাড়ি দিতে পারবেন বিমানবন্দর। র্যাম্পটি ফার্মগেট থেকে হলিক্রস, রেলস্টেশনের ওপর দিয়ে মিলিত হয়েছে উড়াল সড়কে। এছাড়া বিজয় সরণি-তেজগাঁও ফ্লাইওভারের দুই পাশ কেটে উড়াল সড়কে ওঠানামার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সেতু বিভাগের সচিব মো. মনজুর হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, বিমানবন্দর কাওলা থেকে তেজগাঁও পর্যন্ত উড়ালসড়কের মোট দৈর্ঘ্য ১১ দশমিক ৫ কিলোমিটার। তবে র্যাম্পসহ এই পথের দৈর্ঘ্য কিন্তু সাড়ে ২২ কিলোমিটার। বিমানবন্দর থেকে তেজগাঁও পর্যন্ত মোট র্যাম্প ১৫টি। এর মধ্যে ১৩টি র্যাম্প খুলে দেবো। তবে বনানী ও মহাখালীর দুটি র্যাম্প এখনই খুলবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘২ সেপ্টেম্বর উড়ালসড়ক উদ্বোধন হলেও যানবাহন চলাচল করবে তিন সেপ্টেম্বর সকাল ৬টা থেকে।’
সেতু বিভাগ জানায়, নগরীর যানজট নিরসনে জাদুরকাঠি হিসেবে কাজ করবে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে (উড়াল সড়ক)। দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে প্রকল্পের সার্বিক কাজ। যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত চার লেনের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মূল লেনের দৈর্ঘ্য ১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সংলগ্ন কাওলা থেকে তেজগাঁও রেলগেট পর্যন্ত দৈর্ঘ্য সাড়ে ১১ কিলোমিটার। এই অংশটি খুলে দেওয়া হবে। প্রকল্পের পূর্ণাঙ্গ কাজ শেষ হলে বিমানবন্দর থেকে মাত্র ১৫ থেকে ২০ মিনিটেই পাড়ি দেওয়া যাবে যাত্রাবাড়ী। ওঠা-নামার জন্য মোট ২৭ কিমি দীর্ঘ ৩১টি র্যাম্প রয়েছে। র্যাম্পসহ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মোট দৈর্ঘ্য ৪৬ দশমিক ৭৩ কিমি।
প্রথম ধাপ: হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দক্ষিণে কাওলা থেকে বনানী রেলস্টেশন পর্যন্ত, যার দৈর্ঘ্য ৭ দশমিক ৪৫ কিমি।
দ্বিতীয় ধাপ: বনানী রেলস্টেশন থেকে মগবাজার রেল ক্রসিং পর্যন্ত, যার দৈর্ঘ্য ৫ দশমিক ৮৫ কিমি।
তৃতীয় ধাপ: মগবাজার রেল ক্রসিং থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক (কুতুবখালী) পর্যন্ত, যার দৈর্ঘ্য অবশিষ্টাংশ। প্রকল্পে এক হাজার ৪৮২টি পাইল, ৩২৬টি পাইল ক্যাপ, ৩২৫টি কলাম, ৩২৫টি ক্রস-বিম, তিন হাজার ৪৮টি আই গার্ডার নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া তিন হাজার ৪৮টি আই গার্ডার এবং ৩২৮টি ব্রিজ ডেক স্থাপন কাজ শেষ।
প্রকল্পটি ২০১১ সালের জুলাই থেকে ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে বাস্তবায়নের কথা ছিল। মূল প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল তিন হাজার ২১৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। পরে প্রকল্প ব্যয় অপরিবর্তিত রেখে প্রকল্পের মেয়াদ ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। প্রকল্পটির বিদ্যমান অঙ্গের পরিমাণ ও ব্যয় বাড়ার কারণে প্রথম সংশোধনীতে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় চার হাজার ৮৮৯ কোটি টাকা। একই সঙ্গে সময় বাড়ানো হয় ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত।
দ্বিতীয়বারের মতো প্রকল্পে সংশোধনী এনে সময় ও ব্যয় আরও বাড়িয়ে ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে কাজ শতভাগ সম্পন্ন করার কথা জানান সংশ্লিষ্টরা। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর-কুড়িল-বনানী-মহাখালী-তেজগাঁও-মগবাজার-কমলাপুর-সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী-ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক (কুতুবখালী) পর্যন্ত উড়াল সড়কে নির্মাণব্যয় ধরা হয়েছে আট হাজার ৯৪০ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, উড়ালসড়ক বাস্তবায়নের পর ঢাকার উত্তর-দক্ষিণে বিকল্প সড়ক সৃষ্টি হবে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি হেমায়েতপুর-কদমতলী-নিমতলী-সিরাজদিখান-মদনগঞ্জ-ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক-মদনপুরে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করবে। উড়ালসড়ক শুধু বিমানবন্দর ও যাত্রাবাড়ী রুটের যাত্রীদেরই স্বস্তি দেবে না, একইসঙ্গে চট্টগ্রাম, সিলেটসহ পূর্বাঞ্চল ও পদ্মা সেতু হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যানবাহন ঢাকায় প্রবেশ না করে সরাসরি উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে প্রবেশ করতে সহায়তা করবে। উত্তরাঞ্চল থেকে আসা যানবাহনগুলো ঢাকাকে বাইপাস করে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সরাসরি যাতায়াত করতে পারবে। এতে ঢাকা ও এর পার্শ্ববর্তী অংশে নিরসন হবে যানজট।