নিজস্ব প্রতিবেদক: বিজয় সরণি মোড়ের ভয়াবহ যানজটের কথা রাজধানীবাসীর অজানা নয়। মাঝে মাঝে যানজটের ডালপালা শহরজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে যারা রাজধানীর উত্তরা-বিমানবন্দর থেকে বিজয় সরণি হয়ে ফার্মগেট-কারওয়ান বাজার এলাকায় আসেন, তারা জানেন এ পথ কতটা ভয়াবহ। ছুটির দিনে রাস্তা ফাঁকা থাকলেও বিমানবন্দর মোড় থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে সময় লাগে ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট। কিন্তু কর্মদিবসে এ পথ পাড়ি দিতে লেগে যায় দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা।
রাজধানী ঢাকার এ যানজট নিরসনে নতুন এক দ্বারের উন্মোচন হতে যাচ্ছে আজ (শনিবার, ২ সেপ্টেম্বর)। নতুন অধ্যায়ের অপেক্ষায় রাজধানীবাসী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিকেল ৪টায় উদ্বোধন করতে যাচ্ছেন বহুল প্রতীক্ষিত ‘ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে’ প্রকল্পের একটি অংশ। ঢাকার বুকে পুরোপুরি এ উড়াল পথের প্রথম ফেজ অর্থাৎ কাওলা থেকে ফার্মগেট অংশ উদ্বোধন করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পর সর্বসাধারণের জন্য তা খুলে দেওয়া হবে আগামীকাল রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) ভোর ৬টায়। সংশ্লিষ্টরা আশা প্রকাশ করছেন, এ পথ ব্যবহার করে মাত্র ১০-১২ মিনিটে কাওলা থেকে ফার্মগেটে পৌঁছানো যাবে। তবে, এজন্য গুণতে হবে নির্দিষ্ট পরিমাণ টোল।
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রথম ফেজ উদ্বোধন উপলক্ষ্যে শনিবার বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের পুরাতন বাণিজ্য মেলার মাঠে এক সুধী সমাবেশের আয়োজন করেছে আওয়ামী লীগ। সমাবেশে সভাপতিত্ব করবেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বিকেল ৪টায় উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৪টা ১০ মিনিটে স্বাগত বক্তব্য রাখবেন সেতু সচিব মো. মনজুর হোসেন। এরপর ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের পিপিপি প্রকল্প সম্পর্কিত ভিডিও প্রদর্শন করা হবে। পরে বক্তব্য রাখবেন এ প্রকল্পে বিনিয়োগকারীদের প্রতিনিধি। ৪টা ২৫ মিনিটে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সাড়ে ৪টায় সভাপতির বক্তব্য রাখবেন ওবায়দুল কাদের। সর্বশেষ ৪টা ৩৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শেষ হবে সুধী সমাবেশ।
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প ২০০৯ সালে গ্রহণ করে সরকার। তখন এটি ২০১৩ সালে উদ্বোধনের কথা ছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের ১০ বছর পরে এসে এটি উদ্বোধন করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকার, তাও আংশিক অংশের। ফলে এটি ধীর গতির প্রকল্প হিসেবে আখ্যা পেয়েছে। বারবার সময় পরিবর্তন করায় এর ব্যয়ও বেড়েছে
যেসব পথে ওঠা-নামা করা যাবে:
রাজধানীর বিমানবন্দরের পাশে কাওলা থেকে চিটাগাং রোড এলাকার কুতুবখালী পর্যন্ত তৈরি হচ্ছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। তবে, প্রথম ফেজ কাওলা থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত নির্মাণকাজ শেষ হওয়ায় এটি এখন জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হচ্ছে। দ্বিতীয় ফেজ তেজগাঁও থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত কাজ চলমান আছে।
প্রথম ফেজের মোট দূরত্ব সাড়ে ১১ কিলোমিটার। সঙ্গে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠা-নামা করার জন্য রয়েছে মোট ১১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ১৫টি র্যাম্প। সবমিলিয়ে উদ্বোধন হতে যাওয়া প্রথম ফেজের দৈর্ঘ্য সাড়ে ২২ কিলোমিটার। এ ১৫টি র্যাম্পের মধ্যে বনানী ও মহাখালী অংশে মোট দুটি র্যাম্প এখনও পুরোপুরি প্রস্তুত হয়নি। ফলে ১৩টি র্যাম্প নিয়ে যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। বাকি দুটি র্যাম্পের কাজ দ্রুত শেষ করে চালু করা হবে।
র্যাম্পগুলো হচ্ছে— বিমানবন্দরে দুটি (ওঠা-নামা), কুড়িলে তিনটি (দুটি ওঠা-একটি নামার), বনানীতে চারটি (দুটি ওঠা-দুটি নামার), মহাখালীতে তিনটি (একটি ওঠা-দুটি নামার), বিজয় সরণিতে দুটি ওঠার এবং ফার্মগেটে একটি নামার।
যদিও শুরুতে এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় আট হাজার ৭০৩ কোটি টাকা। তবে, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সর্বশেষ ট্যাক্স, ভ্যাটসহ নির্মাণ ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার কোটি ৭০ লাখ টাকায়
সেতু কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, উত্তর হতে দক্ষিণ অভিমুখী যানবাহনের ওঠার স্থান হচ্ছে- হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দক্ষিণে কাওলা; প্রগতি সরণি এবং বিমানবন্দর সড়কের আর্মি গলফ ক্লাব। নামার স্থান হচ্ছে- বনানী কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউ; মহাখালী বাস টার্মিনালের সামনের অংশ; ফার্মগেট প্রান্তে ইন্দিরা রোডের পাশে।
দক্ষিণ হতে উত্তর অভিমুখী যানবাহনের ওঠার স্থান হচ্ছে- বিজয় সরণি ওভারপাসের উত্তর এবং দক্ষিণ লেন; বনানী রেল স্টেশনের সামনে। নামার স্থান হচ্ছে- মহাখালী বাস টার্মিনালের সামনে; বনানী কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউয়ের সামনে বিমানবন্দর সড়ক; কুড়িল বিশ্বরোড এবং বিমানবন্দর তৃতীয় টার্মিনালের সামনে।
যেসব যানবাহন ব্যবহার করতে পারবে
রাজধানীর যানজট নিরসনে তৈরি করা ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে সবধরনের যানবাহন উঠতে পারবে না বলে জানিয়েছে সেতু বিভাগ। এক্সপ্রেসওয়ের ওপর নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করতে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। কোনো পথচারী, দুই চাকা ও তিন চাকার কোনো বাহন এক্সপ্রেসওয়ের সুবিধা নিতে পারবে না। তবে, পরবর্তীতে যেকোনো সময় মোটরসাইকেল চলাচলের অনুমতি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
শুধু ভারী, মাঝারি ও হালকা ট্রাক, যাত্রীবাহী বাস, মিনিবাস, মাইক্রোবাস, পিকআপ, এসইউভি, প্রাইভেটকার ও ট্যাক্সি ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সুবিধা নিতে পারবে নির্ধারিত টোল প্রদান সাপেক্ষে।
পুরো এক্সপ্রেসওয়েটি চালু হলে প্রাথমিকভাবে দৈনিক ৮০ হাজার যানবাহন চলাচল এবং সম্পূর্ণ এক্সপ্রেসওয়েটি পাড়ি দিতে মাত্র ২০ মিনিট সময় লাগবে বলে জানায় কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে উদ্বোধনী অংশ দিয়ে দিনে আট হাজার গাড়ি চলাচল করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে কত গতিতে চালানো যাবে গাড়ি
কাওলা থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে পুরোটা উড়াল সড়ক। এ পথে নেই কোনো সিগন্যাল, নেই কোনো সরাসরি লেফট-রাইট বা ইউ-টার্ন। ফলে পুরো সড়ক সোজা হওয়াতে প্রতিটি যানবাহন বাধাহীনভাবে সর্বোচ্চ গতিতে পাড়ি দিতে পারবে ১১ কিলোমিটার পথ। কিন্তু যানবাহনের জন্য গতি নির্দিষ্ট করে দিয়েছে সেতু বিভাগ। শুরুতে এ পথে ৮০ কিলোমিটার বেগে গাড়ি চলতে পারবে বলে সেতু বিভাগ জানিয়েছিল। কিন্তু শেষ সময়ে এসে সর্বোচ্চ গতি ৬০ কিলোমিটার নির্ধারণ করা হয়। র্যাম্প এলাকায় সর্বোচ্চ গতি থাকবে ৪০ কিলোমিটার। গাড়ির গতি মনিটরিং করা হবে সিসি ক্যামেরায়।
সাড়ে ২২ কিলোমিটার পথের টোল যত
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের টোল নির্ধারণ করেছে সেতু বিভাগ। বর্তমান টোল শুধু শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট অংশের জন্য প্রযোজ্য হবে। চার শ্রেণির যানবাহনের মধ্যে কার, ট্যাক্সি, জিপ, স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিক্যাল, মাইক্রোবাস (১৬ সিটের কম) এবং হালকা ট্রাকের (তিন টনের কম) টোল ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৮০ টাকা।
সবধরনের বাসের (১৬ সিট বা এর বেশি) ক্ষেত্রে ১৬০ টাকা, মাঝারি ধরনের ট্রাকের (ছয় চাকা পর্যন্ত) টোল ৩২০ টাকা এবং বড় ট্রাকের (ছয় চাকার বেশি) ক্ষেত্রে ৪০০ টাকা টোল ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। এ টাকার মধ্যে টোল এবং ভ্যাট অন্তর্ভুক্ত করা আছে।
এক্সপ্রেসওয়ে থেকে ২৫ বছর পর্যন্ত টোল আদায় করবে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান। বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত অংশে মোট ছয়টি টোল প্লাজা আছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক এ এইচ এম এস আকতার।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা যেমন
দেশের প্রথম পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) প্রকল্প হিসেবে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে যাতায়াতকারীদের জন্য ব্যাপক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। পুরো পথে আছে সিসি ক্যামেরা, যা সেন্ট্রাল কন্ট্রোল বিল্ডিং থেকে মনিটরিং করা হবে ২৪ ঘণ্টা। কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে বা জরুরি প্রয়োজনে তাৎক্ষণিক ফার্স্ট এইড প্রদানের ব্যবস্থাও রেখেছে কর্তৃপক্ষ।
ধীর গতির প্রকল্প, আছে সমালোচনাও
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প ২০০৯ সালে গ্রহণ করে সরকার। তখন এটি ২০১৩ সালে উদ্বোধনের কথা ছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের ১০ বছর পরে এসে এটি উদ্বোধন করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকার, তাও আংশিক অংশের। ফলে এটি ধীর গতির প্রকল্প হিসেবে আখ্যা পেয়েছে।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের (বিবিএ) তথ্য বলছে, প্রকল্পটি ২০০৯ সালে নেওয়া হলেও অ্যালাইনমেন্ট চূড়ান্ত ও নকশা প্রণয়নে ব্যয় হয়েছে দুই বছর। পরে ২০১১ সালের জুন মাসে পিপিপি অংশীদারি প্রতিষ্ঠান ইথাল-থাই ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে নির্মাণ চুক্তি সই করা হয়। তবে, এর আগে অর্থাৎ ওই বছর ৩০ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর প্রথম দফার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। কিন্তু অর্থ সংস্থান না হওয়ায় পিপিপি বিনিয়োগকারী প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সময় বাড়ানোর আবেদন জানায়।
এর মধ্যে পরিবর্তন আনা হয় এক্সপ্রেসওয়ের নকশা। নকশা সংশোধন করে প্রায় তিন বছর পর ২০১৩ সালের নভেম্বর মাসে পিপিপি অংশীদার ইথাল-থাইয়ের সঙ্গে আবার নির্মাণ চুক্তি সই করা হয়। ২০১৪ সালের ৩০ অক্টোবর সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন। এরপরও ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ শুরু হয়নি। যদিও সে সময় এক্সপ্রেসওয়েটির নির্মাণকাজ ২০১৭ সালে শেষ করার কথা ছিল।
সংশোধিত হিসাব অনুযায়ী, ২০১৩ সালে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে মোট ব্যয় দাঁড়ায় ১৩ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে ইতালিয়ান থাই ডেভেলপমেন্ট কোম্পানির আট হাজার ৯৪০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করার কথা ছিল। আর ভায়াবিলিটি গ্যাপ ফান্ড (ভিজিএফ) হিসাবে দুই হাজার ৪১৪ কোটি টাকা দেওয়ার কথা ছিল সরকারের। প্রথম অংশের কাজ সম্পন্নের পর ছয় কিস্তিতে এ অর্থ দেওয়ার কথা। এছাড়া জমি অধিগ্রহণ, পুনর্বাসন ও পরিষেবা সংযোগ লাইন স্থানান্তরে ব্যয় ধরা হয় দুই হাজার ৪৬৫ কোটি টাকা। এটিও বহন করবে সরকার।
যদিও শুরুতে এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় আট হাজার ৭০৩ কোটি টাকা। তবে, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সর্বশেষ ট্যাক্স, ভ্যাটসহ নির্মাণ ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার কোটি ৭০ লাখ টাকায়।
দ্বিতীয় দফায় প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন শেষে এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ শেষ করার প্রথম সময়সীমা ছিল ২০১৭ সাল। সেটি পিছিয়ে হয় ২০১৮ সাল। তারপর আবারও পিছিয়ে হয় ২০২২ সাল। এ সময়ে কাজ শেষ না হওয়ার চতুর্থবার সময়সীমা পিছিয়ে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। সর্বশেষ পুরো প্রকল্পের কাজ ২০২৪ সালের জুনে শেষ করা হবে বলে ঘোষণা দেয় কর্তৃপক্ষ।
২০২০ সালের ১ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণকাজ।
প্রকল্পের মেইন লাইনের দৈর্ঘ্য ১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। এতে ওঠা-নামার জন্য ২৭ কিলোমিটারের ৩১টি র্যাম্প থাকছে। এসব র্যাম্পসহ এক্সপ্রেসওয়েটি ৪৬.৭৩ কিলোমিটার দীর্ঘ। পুরো এক্সপ্রেসওয়েতে ১১টি টোল প্লাজা থাকার কথা আছে।
পুরো এক্সপ্রেসওয়েটি চালু হলে প্রাথমিকভাবে দৈনিক ৮০ হাজার যানবাহন চলাচল এবং সম্পূর্ণ এক্সপ্রেসওয়েটি পাড়ি দিতে মাত্র ২০ মিনিট সময় লাগবে বলে জানায় কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে উদ্বোধনী অংশ দিয়ে দিনে আট হাজার গাড়ি চলাচল করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পুরো প্রকল্পের সুফল পেতে আরও অপেক্ষা
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ মো. হাদিউজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, শহরের ভেতর দিয়ে প্রবেশ নিয়ন্ত্রিত এক্সপ্রেসওয়ের যুগে আমরা প্রবেশ করলাম। এর আগে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে আমাদের ছিল। কিন্তু সেটি প্রবেশ নিয়ন্ত্রিত ছিল না। সেই হিসেবে আমাদের এ প্রকল্প অত্যন্ত যুগান্তকারী। তবে, এখন এটি আংশিকভাবে চালু হচ্ছে। এটি দিয়ে এ প্রকল্পের যে মূল লক্ষ্য, সেটি অর্জন সম্ভব হবে না। কারণ, এক্সপ্রেসওয়েটি শহরের ভেতর থেকে উঠে শহরের ভেতরেই নামছে। এর মূল লক্ষ্য ছিল ঢাকাকে ভার্টিক্যালি বাইপাস করা, সেটি এখন সম্ভব হচ্ছে না।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে যখন কুতুবখালী থেকে বিমানবন্দর হয়ে বাইপাইল পর্যন্ত সংযোগ করা যাবে তখন এটি ট্রান্সফরমেশন অবকাঠামো হিসেবে কাজ করবে। তখন ঢাকার মধ্যে প্রবেশ না করে ভারী যানবাহনগুলো ২৪ ঘণ্টা ঢাকা ক্রস করতে পারবে। যানবাহনগুলো যখন ঢাকাকে ভার্টিক্যালি বাইপাস করবে তখন নিচের রাস্তাগুলো অনেকটা হালকা হয়ে যাবে। ফলে গণপরিবহনের জন্য প্রসারিত এবং যানজটমুক্ত একটি সড়ক আমরা পাব। তবে, এটির জন্য আমাদের ২০২৬-২৭ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ মো. হাদিউজ্জামান।
‘বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ট্রাকগুলো শহরের ভেতরে দিনে প্রবেশ করতে পারে না, রাত ১০টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। ফলে পরিবহনের খরচ বাড়ে, অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে যখন কুতুবখালী থেকে বিমানবন্দর হয়ে বাইপাইল পর্যন্ত সংযোগ করা যাবে তখন এটি ট্রান্সফরমেশন অবকাঠামো হিসেবে কাজ করবে। তখন ঢাকার মধ্যে প্রবেশ না করে ভারী যানবাহনগুলো ২৪ ঘণ্টা ঢাকা ক্রস করতে পারবে। যানবাহনগুলো যখন ঢাকাকে ভার্টিক্যালি বাইপাস করবে তখন নিচের রাস্তাগুলো অনেকটা হালকা হয়ে যাবে। ফলে গণপরিবহনের জন্য প্রসারিত এবং যানজটমুক্ত একটি সড়ক আমরা পাব। তবে, এটার জন্য আমাদের ২০২৬-২৭ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।’
এক্সপ্রেসওয়ের নির্ধারিত টোল কিছুটা বেশি— মন্তব্য করে এ যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ বলেন, যেহেতু এক্সপ্রেসওয়ে শহরের মধ্যে চালু হয়েছে, তাই ব্যক্তিগত গাড়িগুলো সবসময় এটি ব্যবহার করবে বলে আমার মনে হয় না। কারণ, রাত ১০টার পর এয়ারপোর্ট রোড ফাঁকা হয়ে যায় অনেকটা। মধ্যরাতে আরও বেশি এবং ভোরের দিকে আরও বেশি ফাঁকা থাকে। সেই হিসেবে আমি সরকারকে অনুরোধ জানাতে চাই, টোলটা ভ্যারিয়েবল হলে ভালো হয়। অর্থাৎ রাতের বেলা টোল কম থাকবে এবং দিনের বেলা যেটা আছে থাকবে। এতে ব্যক্তিগত পরিবহনের মালিকরাও রাতে এ পথ ব্যবহার করতে আগ্রহী হবেন। যদি টোল ২৪ ঘণ্টা একই রকম থাকে, তাহলে রাতের বেলা এ পথে ব্যক্তিগত গাড়ি নাও চলতে পারে।
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে শহরের মধ্যে নতুন এক পথ তৈরি করেছে। নিচের পথের অর্ধেক গাড়িও যদি উপরে চলে আসে, তাহলে নিচের পথ তো অনেকটা খালি হবে। এতে ট্রাফিক জ্যাম কিছুটা হলেও কমবে। পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হলে সুবিধাভোগী হবে সবাই-প্রকল্প পরিচালক এ এইচ এম এস আকতার
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক এ এইচ এম এস আকতার বলেন, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে শহরের মধ্যে নতুন এক পথ তৈরি করেছে। নিচের পথের অর্ধেক গাড়িও যদি উপরে চলে আসে, তাহলে নিচের পথ তো অনেকটা খালি হবে। এতে ট্র্যাফিক জ্যাম কিছুটা হলেও কমবে। পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হলে সুবিধাভোগী হবে সবাই।
‘এয়ারপোর্ট থেকে শুরু করে ফার্মগেট পর্যন্ত আমাদের সাড়ে ১১ কিলোমিটার সড়ক। এ পথে আমাদের ছয়টি টোল প্লাজা আছে। টোল প্লাজাগুলো এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠার মুখেই অবস্থিত। বনানীর ১১ নম্বর রোড এবং মহাখালীর আপ-রোডের র্যাম্প নির্মাণকাজ এখনও চলমান। কাজ শেষ হলে আমরা এটি চালু করে দেব। র্যাম্পসহ মূল ফ্লাইওভার, সব জায়গায় লাইট স্থাপনের কাজ শেষ। এখন সেগুলো টেস্ট করছি। নিজস্ব পরিবহন দিয়ে টোল প্লাজার কার্যক্ষমতা পরীক্ষা করছি।’