অপরাধ ও দুর্নীতি ৩০ মার্চ, ২০২৫ ০৩:৪০

১৯ জুলাই পল্টনে সাইফুল হত্যা

শেখ হাসিনা-কাদেরসহ ১৬৫ জনের নামে মামলা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে খুন ও খুনের প্ররোচনার অভিযোগে পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ ১৬৫ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা হয়েছে।

একই মামলায় কালবেলার সম্পাদক সন্তোষ শর্মাসহ ৮ সাংবাদিককে আসামি করা হয়েছে।

গত বছরের ১৯ জুলাই পল্টন থানাধীন কাকরাইল এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ছাত্র সমাজ শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকালে সাইফুল ইসলাম (২২) নামে যুবককে বেধরক পিটুনি দেওয়া হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

নিহতের চাচাতো ভাই রফিকুল ইসলাম বেপারি (৪৫) গত ১৬ মার্চ বাদী হয়ে রাজধানীর পল্টন থানায় এ মামলাটি দায়ের করেন।

মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী মো. নাসিরুল আমীন।

মামলার এজহার অনুযায়ী উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন- সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী এম এ আরাফাত, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাবেক সংসদ সদস্য বাহাউদ্দীন নাছিম, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র ফজলে নূর তাপস, সাবেক সংসদ সদস্য শেখ সেলিম, নজরুল ইসলাম বাবু, হাজী মো. সেলিম, সাবেক সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী ড. দীপু মনি, সাবেক সংসদ সদস্য নূর-নবী চৌধুরী শাওন, ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক লিয়াকত শিকদার, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফি ও সাধারণ সম্পাদক হুমায়ন কবির, সাংগঠনিক গোলাম সারোয়ার কবির, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মান্নান কচি, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম। 

এছাড়া ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ একাধিক নেতাকে আসামি করা হয়েছে।

মামলায় পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে আসামি করা হয়েছে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুলাহ আল মামুন, সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (এসবি) মনিরুল ইসলাম, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিএমপির ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার হারন অর রশিদ, সাবেক যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার, সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি কৃষ্ণ পদ রায়, সাবেক ডিসি (ডিবি-লালবাগ) মশিউর রহমান অন্যতম। 

পরামর্শদাতা, উসকানিদাতা ও গণহত্যার পক্ষাবলম্বনকারী হিসেবে মামলায় ৮ সাংবাদিককে আসামি করা হয়েছে। তারা হলেন- কালবেলা সম্পাদক সন্তোষ শর্মা, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সেক্রেটারি আইয়ুব ভুঁইয়া, আরটিভির সিইও সৈয়দ আশিক রহমান, সমকালের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক শরিফুল ইসলাম মোল্লাহ, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাবেক সভাপতি ও বৈশাখি টিভির সাবেক চিফ এডিটর সাইফুল ইসলাম, বৈশাখি টিভির সাবেক প্লানিং এডিটর জুলফিকার আলি মানিক, জলবায়ু জার্নাল অনলাইনের মোতাহার হোসেন, সমকাল পত্রিকার আসাদুজ্জামান ও সময়ের আলোর রিপোর্টার হিরা তালুকদার।

মামলায় বাদীর অভিযোগ, আমার চাচাতো ভাই সাইফুল ইসলাম (২২) গত ১৮ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ছাত্র সমাজ শান্তিপূর্ণ আন্দোলন শুরু করে।

ছাত্রজনতার ওই গণআন্দোলনকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে ১ নম্বর আসামি শেখ হাসিনা গত ১৪ জুলাই গণভবনে অনুষ্ঠিত প্রেস কনফারেন্সে আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলে অভিহিত করেন। 

আসামি শেখ হাসিনার ওই ধৃষ্টতামূলক বক্তব্য বাংলাদেশের সব গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত হয়। ১ নম্বর আসামি শেখ হাসিনার এই উসকানিমূলক এবং অপমানজনক বক্তব্যের পর আন্দোলনকারীরা ক্ষুব্ধ হয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন আরও জোরদার করে। 

এমতাবস্থায় ২ নম্বর আসামি ওবায়দুল কাদের বিগত ১৫ জুলাই ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ‘আন্দোলনকারীদের মোকাবিলা করার জন্য ছাত্রলীগই নামীয় সন্ত্রাসী সংগঠনের নেতাকর্মীদের গণহত্যার নির্দেশ প্রদান করেন।

শিক্ষার্থীদের দেখা মাত্র গুলি করে হত্যার নির্দেশ দেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী৷ আসামিদের অবৈধ ও বেআইনি দিক নির্দেশ পালনের উদ্দেশ্যে নিরস্ত্র ছাত্রদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালানোর জন্য নিজ নিজ বাহিনীর সদস্যদের ওপর নির্দেশনা প্রদান করেন।

শান্তিপূর্ণ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের হত্যার ষড়যন্ত্রমূলক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে ১ ও ২ নম্বর আসামির সরাসরি নির্দেশে এবং সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, স্থানীয় আওয়ামী লীগসহ সুবিধাভোগী কতিপয় পুলিশ ও আরও অজ্ঞাতনামা ৪০০-৫০০ নেতাকর্মীদের সশস্ত্র অংশগ্রহণ, উপস্থিতি ও হামলায় শান্তিপূর্ণ আন্দোলনরত ছাত্রদের ওপর হত্যার উদ্দেশ্যে নির্বিচারে সশস্ত্র আক্রমণ ও গুলি করেন। 

গত ১৯ জুলাই দুপুরে পল্টন থানাধীন কাকরাইল মোড় সংলগ্ন এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীদের ছোড়া গুলি গায়ে এসে লাগলে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা ভুক্তভোগী সাইফুল ইসলামকে পিটিয়ে অর্ধ-মৃত অবস্থায় রাস্তায় ফেলে রেখে যায়। 

এমতাবস্থায় ছাত্র জনতা সাইফুল ইসলামকে উদ্ধার করে বেটার লাইফ হসপিটাল এ চিকিৎসার জন্য নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজে পাঠানোর পরামর্শ দেন। পথে অবস্থা খারাপ হওয়ার কারণে ইনসাফ বারাকাহ কিডনি অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করান এবং কর্তব্যরত চিকিৎসক আবারো প্রাথমিক প্রয়োজনীয় চিকিৎসা শেষে রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজে পাঠাইলে পথিমধ্যে তার মৃত্যু হয়। পরে দেশজুড়ে আন্দোলন ব্যাপক জোরদার হলে ১ নম্বর আসামিসহ অন্যান্য আসামিরা বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে গিয়ে আত্মগোপন করেন এবং ছাত্র জনতার অভ্যুত্থান পরবর্তী আদালত সমূহের কার্যক্রম নিয়মিত ভিত্তিতে চলমান না থাকায় মামলা দায়ের করতে বিলম্ব হলো।