জাতীয় ১৮ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:৫৭

চার্জিং ফ্যানের গলাকাটা দাম, যেন ঝোপ বুঝে কোপ ব্যবসায়ীদের!

নিজস্ব প্রতিবেদক
ঝোপ বুঝে যেন কোপ মারছেন ব্যবসায়ীরা। লোডশেডিং আর গরমের আভাস পাওয়া মাত্রই দাম বাড়িয়েছেন চার্জিং লাইট, ফ্যান, জেনারেটরসহ আইপিএসের মতো পণ্যের। ক্রেতার চাহিদা যখন তুঙ্গে, তখন এসব পণ্য মজুত করে দাম বাড়াচ্ছে অসাধু সিন্ডিকেট।

বুধবার (১৭ এপ্রিল) রাজধানীর বায়তুল মোকাররম এলাকা, নবাবপুর, রহমান মার্কেট আর শামস মার্কেটসহ বেশকিছু মার্কেট ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়।
 
তীব্র গরম আর লোডশেডিংকে পুঁজি করে রাজধানীর ইলেকট্রনিকসের দোকানগুলোতে যেন চলছে লুটের রাজত্ব। খুচরা ব্যবসায়ীরা দামের এমন তারতম্যের দায় আমদানিকারকদের ওপর দিলেও, সময় সংবাদের পরিচয় পেয়ে সব লুকান তারা। এমন লুটের রাজত্বেও নীরব ভূমিকায় সরকারি তদারকি সংস্থাগুলো। এদিকে, দ্রুতই এ বাজার নিয়ন্ত্রণের দাবি ভোক্তাদের।
 
তিন সদস্যের পরিবার অনিমেষ বিশ্বাসের। লোডশেডিং আর তীব্র গরমে অসুস্থ হওয়ার ভয়ে রাজধানীর বায়তুল মোকাররমে আসেন রিচার্জেবল ফ্যান কিনতে। দুহাজার টাকার রিচার্জেবল ফ্যান, সেখানে বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ২০০ টাকায়।
 
অনিমেষ বিশ্বাস বলেন, গরম ও লোডশেডিং পাশাপাশি চলছে। তাই চার্জিং ফ্যান, লাইট প্রভৃতির চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দোকানদাররা এসব পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। ঈদের পরে এখনও বাড়তি দামে কিনতে বাধ্য হচ্ছেন এসব পণ্য।
 
বরাবরই দেখা যায়, চাহিদা বাড়লে বাজারে দামও বাড়ে যে কোন পণ্যের। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ৬০০ টাকার রিচার্জেবল লাইটের দাম বেড়ে হয়েছে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা। প্রতিটি রিচার্জেবল ফানের দাম বেড়েছে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত। যদিও সে দায় আমদানিকারকদের ওপর চাপাচ্ছেন বায়তুল মোকাররম এলাকার ব্যবসায়ীরা।
 
খুচরা বিক্রেতা উজ্জ্বল বলেন, শীতের মধ্যেও যে সব ফ্যান খুচরা বাজারে বিক্রি হয়েছে ২ হাজার টাকা থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকার মধ্যে, সেগুলো এখন সব ৩ হাজার টাকার ওপরে বিক্রি করতে হচ্ছে। আমদানিকারকরা দাম বাড়িয়ে দিলে খুচরা ব্যবসায়ীদের কিছু করার নেই।
 
ব্যবসায়ী উজ্জ্বলের তথ্যের সূত্র ধরে রাজধানীর নবাবপুরে আর রহমান মার্কেট ঘুরেও একই চিত্র দেখা যায়। এরপর পাইকারি বিক্রেতা সেন্টুর তথ্য অনুসারে যাওয়া হয় পাশের শামস মার্কেটে। আমদানিকারক মিডিয়া গ্লোবাল মার্কেটিংয়ের স্বত্বাধিকারী গণমাধ্যমের পরিচয় পেয়েই নিজেকে আমদানিকারক হিসেবে পরিচয় দিতে অস্বীকার করে বসেন। তবে তার প্রতিষ্ঠানজুড়ে দেখা যায় আমদানি পণ্যের সমাহার। এসব পণ্য আমদানিকারকের না হলে, মজুত করা হচ্ছে কি-না এমন প্রশ্নে মুহূর্তে সটকে পড়েন তিনি।
 
যদিও নোহা মার্কেটিংয়ের আমদানিকারকের রয়েছে পণ্যের দাম বাড়ানোর হাজারও অজুহাত। তিনি বলেন, ডলার সংকটে ঋণপত্র খুলতে তৈরি হয়েছে জটিলতা। তাই ব্যবসায়ীদের খরচ বেড়ে যাওয়ায়, স্বাভাবিকভাবেই এসব আমদানি পণ্যের দাম বেড়ে গেছে।
 
শুধু লাইট আর ফ্যান নয়, বরং বছরের ব্যবধানে ২০ হাজার টাকার আইপিএসের ব্যাটারির দাম বেড়েছে আরও ৫ হাজার টাকা। ২ থেকে ৩ হাজার টাকা বেড়েছে জেনারেটরের দামেও।
 
এরপরও ব্যবসায়ীরা বলছেন, এখন দামের তারতম্য কিছুটা কম; তবে গরম আর লোডশেডিং বাড়লে দাম আরও বাড়বে পণ্যের।
 
লোডশেডিং আর গরমের তীব্রতা পুরোপুরি বৃদ্ধি না হওয়ার আগেই, রিচার্জেবল এসব পণ্যের দাম তুঙ্গে। ক্রেতারা বলছেন, এখন থেকে সিন্ডিকেটের লাগাম টানা না গেলে, নানা অজুহাতে নিরীহ ভোক্তাদের কাছ থেতে হাতিয়ে নেয়া হবে কোটি কোটি টাকা।