ডেস্ক রিপোর্ট।। 

দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের পাশাপাশি সারাদেশে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সম্মেলনের প্রস্তুতি চলছে। দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে প্রাপ্ত তথ্য উপাত্ত কাজে লাগিয়ে কীভাবে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠন সমূহকে বাংলার জনমানুষের প্রত্যাশিত বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সংগঠনে পরিণত করা যায় তার যোগ বিয়োগ গুণ ভাগ করতে বসেছেন শেখ হাসিনা।

এই অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে দেখা গেছে যে, যারা এসব দুর্নীতির বিরুদ্ধে জড়িত তাদের বিরাট অংশই আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ করেছে কিছু সিনিয়র নেতার আশ্রয়ে, প্রশ্রয়ে বা আর্থিক সুবিধার মাধ্যমে। হয়েছে পদ বাণিজ্য, কমিটি বাণিজ্য, ইত্যাদি। এর ফলে কেন্দ্র থেকে উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত বিভিন্ন দপ্তরের টেণ্ডার নিয়ন্ত্রণ, মাদক ও চোরাচালান, বিভিন্ন ফর্মে চাঁদাবাজি, ইত্যাদি কাজে বড় নেতার আনুকূল্য পেয়ে ফুলে ফেঁপে উঠেছে বাণিজ্য, কমিটি বাণিজ্যে যারা পদের বা কমিটির স্তরভেদে মানানসই মোটা অংকের টাকা লগ্নি করেছে। যেটা ছাত্রলীগ, যুবলীগ বা অন্যান্য সংগঠনের ব্যানারে অপরাধ করে ধরার পড়া নেতাদের দেওয়া তথ্যে পরিষ্কার হয়ে উঠেছে।

বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার কাছে এমন সব তথ্য এসেছে যে, দেশের বহু এলাকায় ত্যাগী কর্মীদের বাদ দিয়ে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মনোনয়নেও বাণিজ্য করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় আর জেলা পর্যায়ের কিছু অসৎ নেতার যোগসাজশে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি, জামায়াত-শিবির, জাতীয় পার্টি, জাসদ, বাসদসহ বিভিন্ন দলের সুবিধাবাদী স্থানীয় নেতারা মূল দল আর অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদ বাগিয়ে নিয়েছে। তাঁদের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে ইউনিয়ন লেভেলে পকেট কমিটি করা হয়েছে। যাতে কাউন্সিলর হন সুবিধাবাদীর সমর্থকগণ। ভোটে গেলেই ত্যাগীরা হেরে যাবেন। কারণ তারা সংখ্যায় কম। এখানেই শুভঙ্করের ফাঁকি। এমতাবস্থায় ইউনিয়ন পর্যায়ে ত্যাগী কর্মীদের দিয়ে স্বচ্ছ আর জনবান্ধব কমিটি করা এতো অল্প সময়ে অসম্ভব হবে। সেটা ভেবেই আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনার নতুন কৌশল হাতে নিয়েছেন বলে একটা নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।

সূত্রে বলা হয়েছে যে, সংসদ সদস্য মনোনয়নের জন্য যে আবেদন ফর্ম আওয়ামী লীগের আছে তাতে সামান্য কিছু পরিবর্তন এনে উপজেলা আর জেলা পর্যায়ের নেতাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের অতীত ইতিহাস ছেকে তুলে নিয়ে আসা হবে বিভিন্ন মাধ্যমে। ২০০৭-২০০৮ সালের আগে কে কী করতো বা তাদের পরিবারের কে কী করতেন তাঁর একটা স্বচ্ছচিত্র আনার চেষ্টা করা হবে। যাতে করে উপজেলা আর জেলা পর্যায়ের কমিটিগুলোতে তুলনামূলক ত্যাগী কর্মীদের স্থান হয়। হতাশ ত্যাগী কর্মীদের মাঝে ইতিমধ্যেই একটা আশার আলো দেখা দিয়েছে। তারা যদি দলের বিভিন্ন পর্যায়ের পদে দায়িত্ব নিতে চান তাঁদের সম্মান দেখানো হবে। বিশেষ করে ১৯৭৫ পরবর্তী সময়ে যারা বা যাদের পরিবার নির্যাতিত হয়েছে তাঁদের প্রাধান্য দেবেন শেখ হাসিনা। এভাবে কম করে হলেও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বা তাঁর অঙ্গসহযোগী সংগঠনে ত্যাগী নেতাদের সংখ্যা বাড়বে। হটলাইন চালু করার ফলে অনেকেই এখন সরাসরি শেখ হাসিনার সাথে তাঁদের চাওয়া পাওয়া বিশেষ করে হতাশার কথা জানাতে পারবেন।

শেখা হাসিনার পরিকল্পনা অনুযায়ী উপজেলা আর জেলা কমিটিতে ত্যাগী কর্মীদের একটা প্রাধান্য আনতে পারলেই ইউনিয়ন পর্যায়ে শুদ্ধি অভিযান শুরু হবে। ইউনিয়নে ত্যাগী আর যোগ্য নেতৃত্ব এলেই গ্রামীণ সংগঠন শক্তিশালী হবে। বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচনে ভোটারের উপস্থিতি আর হতাশাব্যঞ্জক থাকবে না। তাই নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনো সুযোগ থাকবে না। ভোটারবিহীন নির্বাচনের (!) বা কম ভোটারের উপস্থিতির জন্য যে সমালোচনা সরকারকে শুনতে হয় তা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।

শেখা হাসিনা বিশ্বাস করেন যে, তৃণমূলে সংগঠন শক্তিশালী হয়ে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ঠিকাদার আর আমলাদের যোগসাজশে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে আসতে আসতে তা শূন্যের কোঠায় নামতে থাকবে। সরকারের বা বেসরকারি সেবাখাত আরও স্বচ্ছ আর জবাবদিহি হবে। দেশের মানুষের জীবনমানের দ্রুত উন্নতি লাভ করবে।

সাম্প্রতিক কালের ক্যাসিনো আর টেন্ডার দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে পাওয়া তথ্য থেকে একটা বিষয় এখন পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে যে, অসৎ ব্যবসায়ী ছাড়া আমলারা বা প্রশাসনের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ব্যক্তিরা অসৎ হয়ে রাষ্ট্রের সম্পদ লুটে নিতে পারে না। পেশাগত নৈতিকতার অভাব এখন প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে বলে শেখ হাসিনা মনে করেন। এক হাতে তালি বাজে না। দেশসেবার জন্য অঙ্গীকারাবদ্ধ রাজনৈতিক কর্মী আর নেতারা হবেন জনস্বার্থে পরিচালিত কর্মকাণ্ডের পাহারাদার। জনসাধারণকে সচেতন করে তুলে সৎ আমলা আর আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সহযোগিতায় নাগরিক অধিকার সচেতন রাজনৈতিক কর্মীরা জনস্বার্থ রক্ষায় ব্রতী হবেন, শুধু কথায় নয় কাজেও।      

একদিনে যেমন সোনার বাংলা আর বাংলার কিছু মানুষ নষ্ট হয়নি, তাই রাতারাতিও তা ভালো করা যাবে না। এর জন্য কত কম সময়ে লক্ষ্যে পৌঁছানো যায় তার চিন্তা, চেষ্টায় অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী। তিনি আশা করেন যে, রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা নৈতিক শিক্ষায় বলিয়ান হলেই সোনার বাংলায় সোনার মানুষের দেখা পাওয়া যাবে, যার সংখ্যা বাড়তেই থাকবে দিনে দিনে। এভাবেই একদিন তৈরি হবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা, যেটা এখন বঙ্গবন্ধু কন্যার একমাত্র স্বপ্ন।