জাতীয় ১৯ অক্টোবর, ২০১৯ ০১:৫৯

সুব্রত বাইন-শাহাদাত হোসেনসহ দেশের বাইরে ১৩ সন্ত্রাসী

ডেস্ক রিপোর্ট।। 

বিদেশে বসে ঢাকার অপরাধ জগতের কলকাঠি নাড়ছেন তিন শীর্ষ সন্ত্রাসী।  এরা হলেন সুব্রত বাইন, শাহাদাত হোসেন ও শাহিন শিকদার।  ব্যবসায়ী ও ধনাঢ্য বক্তিদের ফোন করে চাঁদা দাবি করছেন তারা।  চাঁদা না দিলে দেয়া হচ্ছে মেরে ফেলার হুমকি।  এই তিন শীর্ষ সন্ত্রাসীরই রয়েছে পেশাদার কিলার গ্রুপ।  মিরপুর, কাফরুল, মগবাজার, খিলগাঁও এলাকার বেশ কয়েকটি খুন ও চাঁদাবাজির ঘটনা তদন্তে উঠে এসেছে এসব তথ্য।

কুখ্যাত সেভেন স্টার গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা, দুই ডজনের বেশি হত্যা মামলার আসামি সুব্রত বাইন দুহাজার তিনে ভারতে পালিয়ে গেলেও এখনও মগবাজার-খিলগাঁও এলাকায় তার আধিপত্য। সম্প্রতি ভারতের একটি মোবাইল ফোন নম্বর থেকে কল আসে খিলগাঁওয়ের পল্লীমা সংসদের সাধারণ সম্পাদকের কাছে। সুব্রত বাইন পরিচয়ে দাবি করা হয় চাঁদা।

ফোনের সেই কথপোকথন রেকর্ড থেকে শুনতে পাওয়া যায়, 'আজকে আমরা যদি ইচ্ছা করতাম তবে আপনার ফ্যামিলির কাউকে ম্যনহোলে বেঁধে আপনাকে ফোন করা হত। আপনার প্রপার্টি বিক্রি করে হলেও আপনার তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করতেন । আমি আপনাকে দুই থেকে তিনি ঘন্টা সময় দেব, এর মধ্যে আপনাকে সহযোগীতা করতে হবে। দুই তিন ঘন্টার মধ্যে ব্যবস্থা করতে হবে। নয়তো আমার গর্ভধারিণী মায়ের কসম খেয়ে বলছি আপনি কিন্তু আপনার স্ত্রী সন্তান সার জীবনের মতো হারিয়ে ফেলবেন। কোন প্রশাসন আপনাকে কিন্তু রক্ষা করতে পারবে না।'

নিরাপত্তা চেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন পল্লীমা সংসদের সাধারণ সম্পাদক। খিলগাঁও পল্লীমা সংসদের সাধারণ সম্পাদক আউয়াল কামরুজ্জামান ফরিদ জানান, 'এই ফোন কল গুলি শুধু আমার কাছেই আসেনি। পল্লীমা সংসদের অনেক সদস্যের কাছেই এসেছে।'

ডিএমপি খিলগাঁও অঞ্চলের সহকারী কমিশনার জাহিদুল ইসলাম সোহাগ জানান, 'আমরা আশা করি খুব দ্রুতই আমরা বের করতে পারবো। তার বাসার ঠিকানা নিয়েছি আমরা। আমাদের যে মোবাইল টিমগুলো ডিউটি করে, তাদেরকে নির্দেশ দিব, তার বাসায় যেন বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখে।'

ঢাকার আরেক ত্রাস শাহিন শিকদার। কাফরুল ও এর আশপাশের এলাকায় চাঁদাবাজি, খুনোখুনিতে জড়িত তার বাহিনী। চলতি বছরের মার্চে এই হাইটেক মাল্টিকেয়ার হাসপাতালের এমডিকে বিদেশ থেকে ফোন করে চাঁদা দাবি করেন শাহিন। চাঁদা না দিলে তাকে মেরে ফেলে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়। থানায় জিডি করলেও ক্রমাগত হুমকির মুখে, প্রাণভয়ে শাহিনের লোকজনের কাছে চাঁদার টাকা তুলে দেন হাসপাতালটির এমডি।

মিরপুরের যম শাহাদাত হোসেন আলোচনায় আসেন ঊনিশশ আটানব্বইয়ে একটি খুনের মধ্য দিয়ে। দুহাজার পাঁচ থেকে ভারতে আছেন দুই মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত এই সন্ত্রাসী। সেখান থেকেই মিরপুরের অপরাধ জগৎ নিয়ন্ত্রণ করছেন শাহাদাত। দুহাজার ষোলোতে এক কোটি টাকা চাঁদা না পেয়ে মিরপুরের হোটেল ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম জুনায়েদকে গুলি করে হত্যা করে শাহাদাতের পেশাদার খুনিরা।

ওই খুনে জড়িত কিলার সবুজকে চলতি বছর গ্রেপ্তারের পর শাহাদাত বাহিনীর কর্মকাণ্ড সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য পায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন- পিবিআই। তাতে দেখা যায়, চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালেই খুনের নির্দেশ পাঠান শাহাদাত। শাহিন ও শাহাদাত বাহিনীর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধে চেষ্টা করছে পুলিশ।

ডিএমপি মিরপুর বিভাগের উপ-কমিশনার মোস্তাক আহমেদ বলেন, 'যখন এরকম কোন অভিযোগ পাই খুব গুরুত্বের সাথে আমরা সেটা দেখি। কিছু তথ্য উপাত্ত আমাদের কাছে আছে। তবে যে সকল সন্ত্রাসীদের নাম ব্যবহার করা হয়েছে আসলেই ওই সকল সন্ত্রাসী এ কাজ গুলো করছে কিনা সেটা আরও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।'

দুহাজার একে ঘোষিত ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর মধ্যে নিহত হয়েছেন দুজন। ১৩ জন ভারত, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে পলাতক। তাদের আইনের আওতায় আনতে ইন্টারপোলের সহায়তায় কাজ করছে পুলিশ সদর দপ্তর।

পুলিশ সদর দপ্তরের গণমাধ্যম ও গণসংযোগ বিভাগের সহকারী মহাপরিদর্শক সোহেল রানা জানান, 'বিদেশে যে সকল সন্ত্রাসী পলাতক থাকেন প্রথমত তাদেরকে চিহ্নিত করা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। বাংলাদেশ পুলিশ ইন্টারপোলের সহায়তায় তাদেরকে চিহ্নত করতে এবং গ্রেপ্তার করতে কাজ করেন।'

সম্প্রতি শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান আহমেদকে দুবাইয়ে গ্রেপ্তারের খবর জানায় পুলিশ সদরদপ্তর। যদিও পরে এই খবর নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। সুইডেন আসলাম, কিলার আব্বাসসহ দেশের কারাগারে রয়েছেন আট শীর্ষ সন্ত্রাসী।