জাতীয় ১ নভেম্বর, ২০১৯ ১১:০০

সংসদের লেকের কাদা তুলতেই খরচ সাড়ে ৪ কোটি!

ডেস্ক রিপোর্ট।। 

জাতীয় সংসদ ভবনের চারপাশের লেক থেকে কাদা তোলা ও সংস্কারকাজে প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা খরচ দেখানো হয়েছে। যদিও এতো টাকা এই কাজে লাগার কথা নয় বলে মনে করছেন কয়েকজন সংসদ সদস্য ও সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। ভিআইপিরা এখানকার আরো কয়েকটি কাজের খাতওয়ারি খরচের হিসাব দেখে বিস্মিত বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে একটি দৈনিক পত্রিকা ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, অনন্য স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত জাতীয় সংসদ ভবনের গায়ে রং করার প্রয়োজন নেই। তবে ওয়াটার-রিপেলেন্ট (এক ধরনের বিশেষ পলিশ) করা যাবে। ভবনের গায়ে বৃষ্টির পানি যাতে কোনো ক্ষতি করতে না পারে, সে জন্য সম্প্রতি ওয়াটার-রিপেলেন্ট করা হয়েছে। আর এ খাতে প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। 

আর সংসদ ভবনের চারপাশের লেকের কাদা তোলা ও সংস্কারকাজে প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা খরচ দেখানো হয়েছে। যদিও বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্য ও সংসদ সচিবালয়সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এতো টাকা এই কাজে লাগার কথা নয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, দেশের অন্যতম প্রধান গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা জাতীয় সংসদ ভবন সংস্কারের নামে খরচের মহোৎসব চালানো হয়েছে। জাতীয় সংসদের ‘আমব্রেলা প্রকল্প’ নামে এই প্রকল্পে ১১৭ কোটি টাকার ‘জাতীয় সংসদের পূর্তকাজ, বৈদ্যুতিক ও যান্ত্রিক সিস্টেমের উন্নয়ন প্রকল্প’ বাস্তবায়নে বড় ধরনের অনিয়ম হয়েছে। গত জুন মাসে শেষ হওয়া এই প্রকল্পের আওতায় সিভিল ওয়ার্কে প্রায় ৪৫ কোটি ৩০ লাখ টাকা এবং ইলেকট্রিক্যাল অংশে প্রায় ৭১ কোটি টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে। সংসদ সদস্যসহ সংসদের ভিআইপিরা এই প্রকল্পের খাতওয়ারি খরচের হিসাব দেখে রীতিমতো বিস্মিত।

জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া এ বিষয়ে বলেন, ‘জাতীয় সংসদ ভবন দেখভাল করে গণপূর্ত বিভাগ। সংসদের চাহিদার প্রেক্ষিতে তারা এই সংস্কার প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। তবে কত টাকার প্রকল্প, কিভাবে বাস্তবায়ন করা হয়েছে, তা আমাকে জানানো হয়নি।’

তিনি জানান, যে পরিমাণ খরচ দেখানো হয়েছে, তা নিঃসন্দেহে অনেক বেশি। এ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের অনিয়ম হলে তা তদন্ত করলেই বেরিয়ে আসবে।

জানা গেছে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রকল্পে কেনাকাটায় আর্থিক অনিয়ম আলোচিত হওয়ার পর সংসদের আমব্রেলা প্রকল্পের আর্থিক অনিয়মও নজরে এসেছে। গণপূর্তের আলোচিত ঠিকাদার ও যুবলীগ নেতা জি কে শামীম গ্রেপ্তার হওয়ার পর তা আরো মনোযোগ পাচ্ছে। সংসদ সদস্য ও সংসদের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মনে করছেন, ওয়াটার-রিপেলেন্টের কাজে ব্যয় করা এক কোটি ৩৬ লাখ টাকার অধিকাংশই লোপাট হয়েছে।

বিষয়টি সরকারি হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও আলোচিত হয়েছে। গত ২৯ সেপ্টেম্বর কমিটির ওই বৈঠকে গণপূর্ত বিভাগের কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে গোপালগঞ্জের বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব চক্ষু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট নির্মাণে এক কোটি ৮০ লাখ ৪১ হাজার ৯৬৫ টাকার দুর্নীতি নিয়ে আলোচনার সময় সংসদ ভবন সংস্কারের পাশাপাশি অন্য প্রকল্পের অনিয়মের প্রসঙ্গও উঠে আসে। 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কমিটির একজন সদস্য জানান, সংসদ ভবনের লেকের কাদা কিছুটা তোলা হলেও কতটা তোলা হয়েছে, কী সংস্কার করা হয়েছে, তা দেখার সুযোগ নেই। ফলে এ খাতে সাড়ে চার কোটি টাকা খরচের হিসাব মেলানো অসম্ভব। তাই বিশেষ কারসাজির মাধ্যমে অন্যান্য প্রকল্পের মতো এই প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা হয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। আর অভিযোগ খতিয়ে দেখতে সংসদীয় তদন্ত কমিটি গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, বহুল আলোচিত আমব্রেলা প্রকল্পটি সংসদ কমিশনের বৈঠকে অনুমোদিত হলেও বিস্তারিত তথ্য সংসদ সচিবালয়ে নেই। এই প্রকল্পে ওয়াটার রিপলেন্ট ও লেক সংস্কার ছাড়াও সংসদ ভবনের জানালায় নতুন করে গ্লাস ফ্রেম ও সিসার ঢালাই দেওয়া হয়েছে। লাগানো হয়েছে কাঠের ফ্রেম। এ কাজে ব্যয় দেখানো হয়েছে পাঁচ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। তিন কোটি ৪১ লাখ টাকা ব্যয়ে করা হয়েছে পাথর রিপ্লেসমেন্টের কাজে। জলছাদ সংস্কারে ব্যয় করা হয়েছে প্রায় চার কোটি টাকা। এ ছাড়া সাড়ে তিন কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে এমপি হোস্টেলের কাঠের দরজা, জানালা, আউট সাইড পয়েন্টিংয়ের কাজ করতে। এসব কাজে অতিরিক্ত ব্যয় করা হয়েছে বলে অভিযোগ।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় সংসদ ভবনের দায়িত্বে থাকা (সম্প্রতি বদলি) গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ ফজলুল হক।

তিনি বলেন, ‘সংসদ ভবনের গায়ে কোনো সাধারণ রং লাগানো হয়নি। বিদেশ থেকে আমদানি করা মূল্যবান ওয়াটার রিপলেন্ট ব্যবহার করা হয়েছে। আর সংসদের লেক তো বিশাল। যেখান থেকে শুধু কাদা তোলা নয়, পুরো লেকটি সংস্কার করা হয়েছে। এসব কাজে খরচ বেশি হয়নি।’

বরং যে পরিমাণ বরাদ্দ ছিল তা থেকে কিছু পরিমাণ অর্থ সাশ্রয় করা হয়েছে দাবি করে এ কর্মকর্তা বলেন, ‘এই প্রকল্পে কোনো ধরনের অনিয়ম হয়নি।’