জেলা প্রতিনিধি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিপি ও গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আমাদের যে প্রত্যাশা ছিল সেটা ধাক্কা খেয়েছে। আমরা ভেবেছিলাম অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতৃত্বে গণ অভ্যুত্থানের পরে একটি সর্বদলীয় সরকার হবে। যেখানে গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব অংশগ্রহণকারী দলগুলোর প্রতিনিধি থাকবে। কিন্তু দুঃখজনক ইউনূস স্যার রাজনীতিবিদকে রাখেনি, এর কারণ অবশ্য কোন কোন দল জাতীয় সরকার গঠনে আপত্তি তুলেছিল।
শনিবার (১৮ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের স্মরণ এবং নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে নীলফামারীর জলঢাকা সরকারি মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব বলেন তিনি।
তিনি বলেন, তারা যেটি বলেছিল যে জাতীয় সরকারের দরকার নেই, আপনারা কয়েক মাস থেকেই, দ্রুত নির্বাচন দিয়ে দিন। কারণ তারা মনে করেছিল নির্বাচন দিলেই আমরা ক্ষমতাই আসতেছি তাহলে ক্ষমতার ভাগ আর অন্য কাউকে দেওয়ার দরকার কী।
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি বলেন, রিমান্ডের মধ্যেও প্রিজন ভ্যান থেকে বলেছিলাম ৯০ শতাংশ সরকার পতন হয়ে গেছে ১০ শতাংশ ধাক্কা দেন, পতন হয়েছে কথার সঙ্গে মিলছে। আজকে এই মঞ্চ থেকে আরেকটি ভবিষ্যবাণী করে গেলাম আগামীর সরকার হবে তরুণদের নেতৃত্বের সরকার।
নুর বলেন, আমরা ২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলনে এই শেখ হাসিনাকে নাকে খত দিতে বাধ্য করেছিলাম, ছাত্রদের দাবির কাছে মাথা নত করতে বাধ্য হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধ হয় ৯ মাস আমরা কোটা সংস্কার আন্দোলন করি সাড়ে আট মাস। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত হামলা মামলার হুমকিতেও মাঠ ছাড়িনি। এই ধারাবাহিক আন্দোলনই তরুণদের প্রেরণা জুগিয়েছে। তরুণরা মনে সাহস পেয়েছে। সেই কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে গঠন করা হয় এই গণ অধিকার পরিষদ। গণঅভ্যুত্থানের বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব পর্যায়ে অনেকে আছে তাদের রাজনৈতিক পরিচয় যদি খুঁজেন তাদের অনেকের রাজনৈতিক হাতেখড়ি হচ্ছে এই গণ অধিকার পরিষদ।
তিনি বলেন, গত ৭ ফেব্রুয়ারি আমরা ঘোষণা দিয়েছিলাম ২০২৪ হবে শেখ হাসিনা পতনের বছর এবং গণ অধিকার পরিষদের নেতৃত্বে পতন হবে, হয়েছে। রিমান্ডের মধ্যেও প্রিজন ভ্যান থেকে বলেছিলাম ৯০ শতাংশ সরকার পতন হয়ে গেছে, ১০ শতাংশ ধাক্কা দেন। আজকে এই মঞ্চ থেকে আরেকটি ভবিষ্যদ্বাণী করে গেলাম, আগামীর সরকার হবে তরুণদের নেতৃত্বের সরকার।
তিনি আরও বলেন, গণ অধিকার পরিষদ কোনো সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় কিংবা গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতার তৈরি হয়নি। প্রতিকূল সময়ে রাজপথে ধারাবাহিক লড়াই সংগ্রাম ও তরুণদের রক্তদানের মধ্য দিয়ে এই দল তৈরি হয়েছে। গণ অধিকার পরিষদ চাইলে জাতীয় পার্টির চেয়ে ভালো সুযোগ সুবিধা নিয়ে রাজনীতি করতে পারতো। বিগত ১৬ বছরে অনেক দল অনেক আন্দোলন করেছে কিন্তু কেউই ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটাতে পরেনি। শেখ হাসিনা প্রশাসনকে রক্ষী বাহিনী করে ঠিকই ক্ষমতায় ছিল।
ভিপি নুর বলেন, এখন সময় মানুষকে নিয়ে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত গড়ে তোলার। নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত হলো অতীতে যারা রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে বা রাজনীতি করেছে, এমপি-মন্ত্রী ছিল, আমার চেয়ে দ্বিগুণ বয়সের, আপনার সব কিছু দেখেছেন কেউই ভালো নয়। প্রবাদে আছে ‘যে যায় লঙ্কায় সেই হয় রাবণ’। যেই ক্ষমতা পায় সেই ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার চেষ্টা করে। প্রভাব আধিপত্য বিস্তার করার চেষ্টা করে। তাই আমরা বলেছিলাম, বাংলাদেশে আগামীতে এমন নির্বাচনী ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, কোনো রাজনৈতিক দল কিংবা যারা সরকার গঠন করবে নির্বাচনে তারা যাতে কোনোভাবে হস্তক্ষেপ করতে না পারে। সাধারণ মানুষকে যাতে ভোট দিতে কেউ কোনোভাবে বাধা প্রদান করতে না পারে। সাধারণ মানুষের যাকে ভালো লাগে তাকেই ভোট দিয়ে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করবে সেই ধরনের নির্বাচন ব্যবস্থা আমরা দেখতে চাই।
দেশের সংকট নিয়ে তিনি বলেন, দেশের সংকট মোকাবিলায় এই দেশের জন্য জাতির জন্য, এই দেশের মানুষের জন্য প্রয়োজন ছিল জাতীয় সরকার। জাতীয় সরকার মানেই আন্দোলনকারী দলগুলোসহ সব দলের প্রতিনিধিদের নিয়ে সরকার গঠন করা। তাহলেই আজকের দেশের যে সংকট এই সংকট তৈরি হতো না। আপনারা জানেন যে হাসিনা সরকার পতনের পরে আমাদের প্রতিবেশী দুষ্ট রাষ্ট্র আমাদের প্রতি আর বন্ধু সুলভ আচরণ করছে না। তার অসহিষ্ণু আচরণ করছে, সীমান্তে উসকানি দিচ্ছে, কাটাতাঁরের বেড়া দেওয়ার চেষ্টা করছে। কোথাও কোথাও আমাদের বিজিবির সঙ্গে এলাকাবাসীর সাথে সংঘাত লাগিয়ে দেওয়ার জন্য উসকানি দিচ্ছে।
কেন্দ্রীয় গণঅধিকার পরিষদের সহ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সোহাগ হোসাইনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন দলের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও মুখপাত্র ফারুক হাসান। জলঢাকা উপজেলা ছাত্র, যুব ও গণঅধিকার পরিষদ আয়োজিত গণসমাবেশে কেন্দ্রীয়, রংপুর মহানগর, জেলা ও উপজেলা শাখার নেতারা উপস্থিত ছিলেন।