ডেস্ক রিপোর্ট ।।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) দাবি করা ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকার মধ্যে ২০০ কোটি টাকা দিতে চায় গ্রামীণফোন।
তবে অর্থমন্ত্রী ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রীর সঙ্গে গত ৩ অক্টোবর গ্রামীণফোনের সমঝোতা বৈঠকের প্রস্তাবনার শর্ত পূরণ হলেই কেবল এই টাকা দিতে রাজি গ্রামীণফোন। কিন্তু বিটিআরসি এই প্রস্তাবে রাজি নয়। রাষ্ট্রীয় এই প্রতিষ্ঠানটি হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়েছে। এ অবস্থায় আপিল বিভাগ আগামী ১৮ নভেম্বর আদেশের দিন ধার্য করেছেন।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের ছয় বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ আজ বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) এ আদেশ দেন।
আদালতে গ্রামীণফোনের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট এ এম আমিনউদ্দিন, ব্যারিস্টার ফজলে নুর তাপস ও ব্যারিস্টার মেহেদী হাসান চৌধুরী। বিটিআরসির পক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ব্যারিস্টার খন্দকার রেজা-ই-রাকিব।
হাইকোর্ট গত ১৭ অক্টোবর গ্রামীণফোনের কাছে ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা দাবি করে বিটিআরসির দেওয়া চিঠির কার্যকারিতার ওপর অন্তবর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা দেন। ওই আদেশ স্থগিত চেয়ে বিটিআরসি আপিল বিভাগে আবেদন করে। এই আবেদনের ওপর শুনানিকালে গ্রামীণফোন আপাতত কত টাকা দিতে পারবে- তা প্রথমে ৩১ অক্টোবরের মধ্যে এবং পরে ১৪ নভেম্বরের মধ্যে আদালতকে জানানোর নির্দেশ ছিল। নির্ধারিত দিনে গ্রামীণফোন ২০০ কোটি টাকা দিতে পারবে বলে জানায়। তবে বিটিআরসি তাতে রাজি না হওয়ায় আদালত আগামী ১৮ নভেম্বর আদেশের জন্য দিন ধার্য করেন।
বৃহস্পতিবার শুনানিকালে গ্রামীণফোনের পক্ষে গত ৩ অক্টোবর অর্থমন্ত্রী ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রীর সঙ্গে সমঝোতা বৈঠকে পাঁচটি প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়।
প্রস্তাবগুলো হলো :
লাইসেন্স বাতিলের কারণ দর্শানোর নোটিশ ও নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করবে বিটিআরসি, অন্যদিকে অপারেটররা মামলা প্রত্যাহারে পদক্ষেপ নেবে।
দুই পক্ষ একটি কমিটি গঠন করে পাওনা পরীক্ষা অথবা পরীক্ষার পদ্ধতি বের করবে।
কমিটি গঠন ও কমিটির কাজ শুরুর আগে সাত দিনের মধ্যে গ্রামীণফোন বিটিআরসিকে ১০০ কোটি টাকা ও পরের এক মাসের মধ্যে আরো ১০০ কোটি টাকা দেবে।
রবি দুই দফায় দেবে ৫০ কোটি টাকা।
এসব প্রস্তাব দুই অপারেটর তাদের যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে পর্যালোচনা ও অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করবে এবং অর্থমন্ত্রী, টেলিযোগাযোগমন্ত্রী, এনবিআর ও বিটিআরসির চেয়ারম্যান কমিটির কার্যক্রম পর্যবেক্ষণে রাখবেন।
এই শর্ত মানলে গ্রামীণফোন টাকা দিতে রাজি বলে উল্লেখ করা হয়। এর বিরোধিতা করে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, তারা নিম্ন আদালতে টাইটেল স্যুট (স্বত্ত মামলা) করল। এই মামলায় হাইকোর্ট নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। আমরা এই নিষেধাজ্ঞা স্থগিত চাই।
শুনানি শেষে আদালত থেকে বেরিয়ে বিটিআরসির আইনজীবী ব্যারিস্টার খন্দকার রেজা-ই-রাকিব সাংবাদিকদের বলেন, আমরা বলেছি এই মুহূর্তে আমাদের পাওনা টাকার অর্থেক দিলেই কেবল তাঁদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি আছি। আমরা বলেছি, গ্রামীণফোন ওই টাকা দেওয়ার পর আলোচনায় যদি দেখা যায় গ্রামীণফোনের কাছ থেকে বেশি টাকা দেওয়া হয়েছে তবে অতিরিক্ত টাকা ফেরত দেওয়া হবে বা সমন্বয় করা হবে। আর যদি দেখা যায় আরো টাকা পাওয়া যাবে, তখন বাকি টাকা দেবে গ্রামীণফোন।
কিন্তু গ্রামীণফোন বলেছে, গত ৩ অক্টোবর অর্থমন্ত্রী ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রীর সঙ্গে গ্রামীনফোনের অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে গ্রামীনফোনের প্রস্তাবনার শর্ত মানলে তারা ২০০ কোটি টাকা দিতে রাজি। তবে গ্রামীণফোনের আইনজীবী ব্যারিস্টার মেহেদী হাসান চৌধুরী বলেন, দুই মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের সিদ্ধান্ত মানলেই আমরা ২০০ কোটি টাকা দিতে রাজি আছি।
এর আগে প্রায় ২৭টি খাতে ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা (নিরীক্ষা আপত্তির দাবি) দাবি করে গ্রামীণফোনকে গত ২ এপ্রিল চিঠি দেয় বিটিআরসি। ওই চিঠির বিরুদ্ধে ঢাকার নিম্ন আদালতে মামলা করে গ্রামীণফোন। মামলায় অর্থ আদায়ের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করে। গত ২৮ আগস্ট নিম্ন আদালত অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আবেদন খারিজ করে দেয়।
ওই আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করে গ্রামীণফোন। ওই আপিলটি শুনানির জন্য গ্রহণ করেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে গ্রামীণফোনের কাছ থেকে টাকা আদায়ের ওপর দুই মাসের অন্তবর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা দেন। এই নিষেধাজ্ঞা স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করে বিটিআরসি।






















