নিজস্ব প্রতিবেদক: জিয়াউর রহমানের শাসনামলে বিমান বাহিনীর এক বিদ্রোহের ঘটনায় দণ্ডিতদের চাকরির স্বাভাবিক অবসর গ্রহণ পর্যন্ত বেতন, অন্য সব সুবিধা, পেনশনসহ ক্ষতিপূরণ কেন দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে সামরিক আদালতে দণ্ডিতদের সাজা কেন অবৈধ নয় তাও জানতে চাওয়া হয়েছে।
এক রিট আবেদনের শুনানি করে বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর বেঞ্চ মঙ্গলবার এই রুল জারি করে।
১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবর সেই সামরিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বিমান বাহিনীর সার্জেন্ট সাইদুর রহমানের ছেলে মো. কামরুজ্জামান মিঞা লেলিনসহ বিমান বাহিনীর ১৪ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত সেনা ও বিমান বাহিনীর কর্মকর্তাসহ ৮৮ পরিবারের পক্ষে ২০১৯ সালে এই রিট আবেদনটি করা হয়।
আদালতে তাদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, সঙ্গে ছিলেন মো. মতিউর রহমান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার এবিএম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ।
সেনা ও বিমান বাহিনীর ওই ৮৮ সদস্য স্বাভাবিকভাবে অবসরে গেলে সেই সময় পর্যন্ত যে বেতন, অন্য সব সুবিধা ও পেনশন তারা পেতেন, তা দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, রুলে তা জানতে চেয়েছে হাই কোর্ট।
পাশাপাশি ১৯৭৭ সালের ‘মার্শাল ল রেগুলেশনে’ গঠিত ওই ট্রাইব্যুনালে দোষী সাব্যস্ত করা ও দণ্ডকে ‘অবৈধ’ ঘোষণা করে দণ্ডিতদের দেশপ্রেমিক হিসাবে বিবেচনার নির্দেশ কেন দেয়া হবে না– তাও জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।
আবেদনকারীদের পরিবারের সদস্যদের সরকারি চাকরিতে ‘সার্ভিস অব ওয়ার্ড’ দিতে কেন বিবাদীদেরকে নির্দেশ দেওয়া হবে না, সেই প্রশ্নও বিবাদীদের করা হয়েছে।
প্রতিরক্ষা সচিব, আইন সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, চিফ অব আর্মি স্টাফ, চিফ অব এয়ার স্টাফকে চার সপ্তাহে মধ্যে ওই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
রিট আবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবর ভোররাতে বিমানবাহিনীতে সংঘটিত বিদ্রোহ কঠোরভাবে দমন করা হয়েছিল। তখন সামরিক আদালতে ফাঁসি দেওয়া হয় ১১ জন অফিসারসহ এক হাজার ৪৫০ জন বিমান সেনাকে। বরখাস্ত ও চাকরিচ্যুত হন আরও চার হাজার জন। নিখোঁজ হন অসংখ্য।
প্রসঙ্গত, ১৯৭৫ সালের বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসা জিয়াউর রহমান সেনাপ্রধান হন। ১৯৭৬ সালে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে তিনি ক্ষমতা দখল করেন। তার পরের বছর তিনি রাষ্ট্রপতির পদও নেন।
সেনাপ্রধান জিয়া ক্ষমতা দখলের পর সামরিক বাহিনীতে অনেকগুলো বিদ্রোহ-অভ্যুত্থানের চেষ্টা চলেছিল, যাতে জড়িতদের সামরিক আদালতে বিচার করে মৃত্যুদণ্ডসহ নানা সাজা দেওয়া হয়। ১৯৭৬ সালে এ রকম এক বিচারে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত কর্নেল আবু তাহেরের বিচার ইতোমধ্যে ‘অবৈধ’ ঘোষণা করে রায় দিয়েছে হাই কোর্ট।
আমাদের কাগজ/ ইদি



















