উসমানীয় সম্রাজ্যের সর্বশ্রেষ্ট শাসক ধরা হয় সুলতান সুলেমানকে। তুর্কি ভাষায় যার উপাধি মুহতেশিম সুলায়মান বা মহৎ সুলায়মান, তাকে বলা হতো কানুনী সুলতান অর্থ্যাৎ আইনের বিষয়ে ছিলেন আপোষহীন। ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে ফ্রান্স, ইটালি এমনকি তৎকালীন জার্মানীও সুলতান সুলেমানের ভয়ে তটস্থ থাকতো। তিনি যখন আরব দেশ ভ্রমনে যেতেন। রাস্তায় হাজার হাজার লোক জড় হয়ে যেতো। ইউরোপীয় দেশ গুলোতে তিনি পরিচিত সুলেমান দ্য ম্যাগনিফিসেন্ট হিসেবে।
এতো কিছুর পরেও সুলতান সুলেমানের ছিলো এক অন্ধকার দিক। তিনি সবসময় মত্ত থাকতেন বহুগামিতায় আর অবাধ যৌনতায়। তিনি ইতিহাসের সবচেয়ে বড় হেরেম প্রতিষ্ঠা করেন। যেখানে বিভিন্ন দেশ থেকে জোর করে নিয়ে আসা হতো মেয়েদের, অনেককে ক্রয় করা হতো। পরবর্তিতে তাদেরকে বানানো হতো সুলতানের যৌনদাসী।
তার সবচেয়ে সুপরিচিত দাসী ছিলেন হাসেকি হুররেম সুলতান। পরবর্তিতে যদিও সুলতান তাকে বিয়ে করে পত্নীর মর্যাদা দেন। তার অতীত সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য জানা যায় না। তবে তূর্কি বিষয়ে গবেষক পোলিশ কবি সামুয়েল দ্বারদভস্কির দেওয়া তথ্য অনুসারে, হুররেম সম্ভবত কোন ইউক্রেনীয় অর্থোডক্স ধর্মযাজকের মেয়ে। যাকে জোরপূর্বক সুলতানের হেরেমের জন্য অপহরন করা হয়। তবে অনেক ঐতিহাসিক মত দেন যে শৈশবে তার ডাক নাম ছিলো নাস্তিয়া, তিনি ছিলেন একজন পোলিশ। যিনি পরবর্তিতে নিজের রূপ যৌবন দিয়ে সুলতানকে করায়ত্ব করে হেরেমের সবচেয়ে প্রভাবশালী নারীতে পরিনত হোন, হয়ে উঠেন সুলতানের প্রিয়তম সঙ্গিনী হাসেকি সুলতান। তিনিই সুলতানের সর্বাধিক সন্তানের জন্ম দেন এবং সর্বপ্রথম হেরেমের যৌন দাসী থেকে তিনি সুলতানের বৈধ পত্নীতে পরিনত হন। তারই পূত্র সেলিম ১৫৬৬ সালে উসমানীয় সালতানাতের সিংহাসনে আরোহন করেন।
হেরেমে সুলতানের প্রথম স্ত্রী ছিলেন মাহিদেভরান। হুররেম হেরেমে আসার আগে তিনিই ছিলেন সুলতানের সবচেয়ে কাছের। পরবর্তিতে সুলতানের শয্যা সঙ্গিনী হওয়া নিয়ে এদের মাঝে দ্বন্দের সৃষ্টি হয়। অনেকে বলেন সেই দ্বন্দের ধারাবাহিকতায় হুররেমের ফাদে পড়ে সুলতান তার বিশ্বস্ত পূত্র মোস্তফার মৃত্যুর ফরমান জারী করেন। কারন হুররেমের প্রতি তার অত্যধিক দুর্বলতার কারনে তিনি চাইতেন যে হুররেমের কোন সন্তানই যেন উত্তরাধিকার হয়। পূত্রের মৃত্যূর পর মাহিদেভরান হেরেমে তার অবস্থান হারান। এবং হেরেম থেকে বের হয়ে দারিদ্রের কষাঘাতে তিনি মানবেতর জীবন কাটাতে থাকেন। পরবর্তিতে দ্বিতীয় সেলিম ক্ষমতায় আরোহন করলে তার জন্য ভাতা চালু করেন। জীবনের শেষ দিনগুলোতে তাই তিনি যথেষ্ট স্বচ্ছল ছিলেন।
সুলতানের আরেকজন বিখ্যাত যৌনদাসী ছিলেন গুলফাম হাতুন। সুলায়মান তাকেও ভালোবাসতেন। অনেক রাত তিনি তার এই যৌনদাসীর সাথে কাটিয়েছেন। তবে পরপর দুটি মৃত সন্তান প্রসব করায় তিনি হেরেমে তার অবস্থান হারান। কোন এক অজ্ঞাত কারনে তার মৃত্যূ হয়। অনেক ঐতিহাসিকই বলেন, তাকে হয়তো কোন প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের কারনে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে।
এছাড়াও সুলতানের হেরেমে যৌনদাসীর তালিকা বেশ লম্বা। অনেক ঐতিহাসিকই বলেন, সুলেমানের হেরেমে সমকামিতাও চলতো, মদ্যপান প্রচলন ছিলো। আর হেরেমের প্রতিটি নারী ছিলো রাজনৈতিক ভাবে সচেতন। প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের অংশ। এমন কি সেসব ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতায় হেরেম খুনের মত ঘটনাও ঘটতো।