মুক্তমত ২৮ নভেম্বর, ২০২৩ ০১:৪৭

নির্বাচন গ্রহণযোগ্য না হলে বাংলাদেশে বিপদের সীমা থাকবে না 

আমাদের কাগজ ডেস্ক: দেশে মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১১ জন। গত ১৫ নভেম্বর ২০২৩ তারিখে নির্বাচন কমিশন ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে। আর এই নির্বাচনে ছোট-বড় সব দলকে অংশ নিতে বলা হয়েছে। বেশ কিছুদল এরই মধ্যে অংশও নিয়েছে। তা ছাড়া ধারণা করা হচ্ছে যে বিএনপিকে উষ্কে বেশ কিছু নেতাকে নির্বাচনে নিয়ে আসতে সমর্থ হবে আওয়ামী লীগ।

দ্বাদশ নির্বাচন মুখে ঠিক এমনটিই ঘটছে। নির্বাচনের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে (সোমবার) মনোনয়নপত্র নেন বিএনপির দুই নেতা। যে কারণে গতকাল (মঙ্গলবার) বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব তাঁদেরকে বহিষ্কার করেন। 

তবে এসব কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের পরিকল্পিত একতরফা নির্বাচনকে কোনোমতেই বৈধতার লেবাস পরানো যাবে বলে মনে করেন বেশ কিছু সংশ্লিষ্ট মহল। দেশে-বিদেশে এই নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা পাবে না বলে মনে করা হচ্ছে। 

সম্প্রতি ডোনাল্ড লুর পত্র নিয়ে বাংলাদেশ-মার্কিন সম্পর্কে বড়সড় ফাটল দেখা দিয়েছে, তার সংলাপের আহ্বানকে আওয়ামী লীগ প্রত্যাখ্যান করেছে। আগামী নির্বাচনকে যারা বাধাগ্রস্ত করবে তাদের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে বলে ২০২৩ সালের মে মাসে ঘোষণা দিয়েছিল, সম্প্রতি তারা বিষয়টি আবার সবাইকে মনে করিয়ে দিয়েছে। এই ভিসা নিষেধাজ্ঞা একমাত্র পদক্ষেপ হবে বলে মনে হয় না। সম্ভবত আরও কিছু নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

প্রকাশ্যে না বললেও মার্কিন সরকার নিশ্চিত হয়েছে যে ২০১৮ সালের বাংলাদেশের সংসদীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যা করেছে সেটা ছিল লজ্জাজনক বলে মনে করেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। 

 

তাহলে কী প্রতিযোগিতাহীন নির্বাচন দীর্ঘমেয়াদি সংকট তৈরি করবে? 

নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণার পর এই সন্দেহ জোরদার হচ্ছে যে আওয়ামী লীগ আবারও একতরফা নির্বাচনের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে। 

জনগণের কাতার থেকে উঠে আসা দল আওয়ামী লীগকে নানা নামে সংজ্ঞায়িত করুন করেছে। পুঁজি-লুটেরা এবং পুঁজি পাচারকারীদের দল হিসেবে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ চিহ্নিত করছে, এর চেয়ে দুঃখজনক আর কী হতে পারে? সে জন্যই তাদের ভোট কারচুপির চিন্তা করতে হয়েছে ২০১৮ সালে।

তবে অনেকে নিত্য পণ্যের দাম বাড়া নিয়ে ভিন্ন মত প্রদান করতে দেখা গিয়েছে। সেটি হল: ভোটের আগে দাম বাড়লে নির্বাচনের আগে ও পরের সমিকরণ মেলানোটা সহজ হবে। আবার অনেকে দাম বাড়াটাকে নিতেই পারছেন না।  

বর্তমান সরকারের নানা আচরণে অনেক দিন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র বিরক্ত। ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জো বাইডেন ২০২০ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ২০২১ সালের ২০ জানুয়ারি ক্ষমতা গ্রহণের পর গণতন্ত্রকে বৈশ্বিক নীতির অংশ হিসেবে নতুন করে গ্রহণ করার পর বিভিন্ন আলামত থেকে বোঝা যাচ্ছিল যে বাংলাদেশের সরকারের প্রতি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের দৃষ্টিভঙ্গি খুব বন্ধুসুলভ নয়।

২০১৩ থেকে ২০১৬ সালের ১ জুলাইয়ের হোলি আর্টিজানের নৃশংস হত্যাযজ্ঞ পর্যন্ত দেশে বেশ কিছু জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে। এসব খুন-জখম থেকে পুলিশ বাহিনীও রক্ষা পায়নি। জঙ্গিদের তৎপরতা দমন করতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যে অভিযান শুরু করে, তাতে ক্রসফায়ারে অনেক জঙ্গি মারা পড়েন। যত ব্যাখ্যাই দেওয়া হোক না কেন, এগুলো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হিসেবেই বিবেচিত। কিন্তু মনে রাখতে হবে, আইনের শাসনই নাগরিকদের রক্ষাকবচ। সন্দেহভাজন জঙ্গি-সন্ত্রাসীরা যদি বিচারের মাধ্যমে অপরাধী প্রমাণিত হওয়ার আগেই পুলিশ বা র‍্যাবের হাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা পড়তে শুরু করে, তাহলে রাষ্ট্রের শাসকদের এবং গুপ্তঘাতকদের হুকুমদাতাদের মধ্যে আর কোনো পার্থক্য থাকে না।

জঙ্গিরা যে মাত্রায় হত্যাযজ্ঞ শুরু করেছিল, তাতে তাদের দমন করা জরুরি হয়ে পড়েছিল। কিন্তু আইনের শাসনকে সমুন্নত রেখেই জঙ্গিবাদী ঘাতক বাহিনীকে নির্মূল করার কোনো বিকল্প নেই। ক্রসফায়ার, এনকাউন্টার, হার্ট-অ্যাটাক—যে নামেই বিচারবহির্ভূত হত্যাকে ডাকা হোক, তা সভ্যতাবহির্ভূত। ২০১৬ সালের পর দেশে জঙ্গিবাদী সন্ত্রাস অনেকখানি কমে গেলেও ক্রসফায়ারের মতো আইনের শাসন থেকে বিচ্যুতি রাষ্ট্রের শাসকদের প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। দরকার ছিল অতি দ্রুত বিচারের মাধ্যমে গ্রেপ্তারকৃত সন্দেহভাজন জঙ্গি খুনিদের ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে যথোপযুক্ত শাস্তি বিধান করা।

উল্লেখ্য, লাইনচ্যুত ভোটের রাজনীতি মেরামত করে ২০২৪ সালের নির্বাচনকে অবাধ ও সুষ্ঠু করতে যদি আওয়ামী লীগ যত্নবান না হয়, তাহলে জাতি বিপদে পড়তে পারে, যদি বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশগুলো ঐক্যবদ্ধ কোনো পদক্ষেপ নেয়। এমনকি এই ইস্যুতে খোদ জাতিসংঘও কোনো ধরনের উদ্যোগ নিতে পারে। তখন শুধু যুক্তরাষ্ট্রকে দোষারোপ করে পার পাওয়া যাবে না।

আমাদেরকাগজ/এমটি