জেলা প্রতিনিধি
লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে চরের প্রায় ১৩০০ একর জমি দখল করতে বিএনপি নেতারা জোট বেঁধে নেমেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ইতিমধ্যে জোরপূর্বক চাষ যোগ্য জমি দখল করে লাল পতাকাও লাগিয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ জানিয়েছেন কৃষকরা। মেঘনা উপকূলীয় নতুন কানিবগার চর, চর কাচিয়ায় খাস ও ব্যক্তি মালিকানাধীন এসব জমিতে কৃষকদের চাষ করতে দিচ্ছে না প্রভাবশালী নেতারা।
এ ঘটনায় সোমবার (২০ জানুয়ারি) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত উপজেলা শহরে দস্যুদের কবল থেকে জমি দখলমুক্ত চেয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন কৃষকরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, চরের জমি দখলমুক্ত চেয়ে সোমবার দুপুরে রায়পুর বাস টার্মিনাল এলাকা থেকে কৃষকদের একটি মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি প্রধান সড়ক হয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়ের সামনে যায়। সেখানে আন্দোলনকারী কৃষকরা প্রতিবাদ সমাবেশ করেন। এসময় ‘দলিল যার, জমি তার’ স্লোগানে মিছিল মুখর হয়ে ওঠে। পরে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে ফিরে যায় তারা।
সমাবেশ থেকে বলা হয়, রায়পুর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোস্তফা গাজী, মোবারক আলী, বাদশা গাজী ও দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হারুনুর রশিদ হাওলাদার, বিএনপি নেতা ফারুক কবিরাজ, উপজেলা কৃষকদলের সদস্য সচিব জিএম শামিম দলবল নিয়ে চরে দস্যুতা করছেন। আন্দোলনকারীরা রঙিন ফেস্টুন-ব্যানারে ও বক্তব্যে ওই নেতাদের নাম উল্লেখ করে অবৈধ দখলের কথা তুলে ধরেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার নতুন কানিবগার চর, চর কাচিয়াসহ কয়েকটি চরে প্রায় ১৩০০ একর জমি রয়েছে। ওই জমি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের স্থগিতাদেশ, লক্ষ্মীপুর ভূমি কমিশন, জেলা প্রশাসকের আদেশ ও চর কানিবগার গেজেট রিপোর্ট রয়েছে। এতে ব্যক্তি মালিকানা ছাড়া বন্দোবস্ত নিয়ে স্থানীয় কৃষকরা ওই জমিগুলোতে চাষাবাদ করে আসছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে স্থানীয় নেতাদের দখলে ছিল ওই জমি। তারা অনুগতদের দিয়ে সেখানে চাষাবাদ করাতেন। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর উত্তর ও দক্ষিণ চরবংশী বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলের ১০-১৫ জন নেতা প্রতিযোগিতা করে চরের জমি দখলে নামে। দখলকৃত জমিতে তারা লাল পতাকা টানিয়ে দিয়েছে। তারা কৃষকদের মারধরসহ হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন।
এদিকে চরে জমি দখল ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, বাড়ি-ঘরে হামলা ভাঙচুর হয়। এসব ঘটনায় উত্তর চরবংশী ইউনিয়ন বিএনপি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। এছাড়া দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি সোহাগকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।
কৃষক গণি মিয়া বলেন, বিএনপি নেতা বাদশা গাজী, মোবারক আলী, শামীম গাজী, হারুন হাওলাদাররা আমাদের চরের জমি দখলে নিয়েছে। তাদের অত্যাচারে আমরা অতিষ্ঠ। এতে বাধ্য হয়েই প্রতিবাদ সমাবেশে এসেছি।
কাদের আলী বলেন, ৫ আগস্টের পর থেকে বিএনপি নেতারা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তাদের কারণে জমিতে আমরা চাষাবাদ করতে পারছি না।
অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোস্তফা গাজী বলেন, আমি কারো জমি দখল করিনি। কাউকে মারধর করিনি। বিএনপির কেউ দখলকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নেই বলে দাবি করেন তিনি।
আরেক যুগ্ম আহবায়ক বাদশা গাজী বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুতের পর চরে যেন কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত না হয় এজন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছি। বহিষ্কৃত জামায়াত নেতাসহ কয়েকজন পরিকল্পিতভাবে চরের জমি দখলের সঙ্গে আমার নাম জড়িয়েছেন। এর সঙ্গে আমি জড়িত নই।
রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইমরান খান বলেন, দুর্গমচরগুলোতে পেশি শক্তি দিয়ে কৃষকদের হয়রানি করার অভিযোগ পেয়েছি। তবে কেউ লিখিত অভিযোগ করেননি। আমি কৃষকদের প্লেকার্ডে কিছু দখলদার ব্যক্তির নাম দেখেছি। বিষয়টি উপজেলা সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হবে।