আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আনুষ্ঠানিকভাবে দ্বিতীয়বারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। অভিষেকের পর তিনি দীর্ঘ বক্তব্য দেন এবং সেখানে আবারও পানামা খাল দখলসহ কয়েকটি নির্বাহী আদেশ জারির ঘোষণা দেন।
এদিকে অভিষেক বক্তব্যে পানামা খাল দখলের ডাক দেওয়ার পর ট্রাম্পকে পাল্টা হুংকার দিয়েছেন পানামার প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেছেন, পানামা খাল পানামার হাতে আছে এবং পানামার হাতেই থাকবে। মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, পানামার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পানামা খাল “ফিরিয়ে নেওয়ার” পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করেছেন। একইসঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে তিনি বলেছেন, বৈশ্বিক বাণিজ্যের অন্যতম প্রধান এই রুটটি তার দেশের (পানামার) হাতে আছে এবং তাদের হাতেই থাকবে।
এর আগে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর অভিষেক ভাষণে ট্রাম্প দাবি করেন, পানামা নিরপেক্ষ থাকার প্রতিশ্রুতি “ভঙ্গ” করেছে। তিনি বলেন, “চীন এখন পানামা খাল পরিচালনা করছে। আমরা চীনকে এই খাল দেইনি, পানামাকে দিয়েছিলাম। কিন্তু এখন আমরা এটি আবার ফেরত নেব।”
ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই বক্তব্যের জবাবে প্রেসিডেন্ট হোসে রাউল মুলিনো বলেন, তিনি ট্রাম্পের কথা “সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করছেন”। তিনি বলেন, “বিশ্বে এমন কোনও দেশ নেই যারা আমাদের কতৃত্বে হস্তক্ষেপ করতে পারে”।
মূলত পানামা খাল লাতিন আমেরিকার দেশ পানামায় অবস্থিত এবং কয়েক দশক ধরে দেশটিই তাদের গুরুত্বপূর্ণ এই পানিপথ নিয়ন্ত্রণ করছে। এছাড়া পানামা খাল যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য রুট। দেশটির সমস্ত কন্টেইনার জাহাজের প্রায় ৪০ শতাংশ আটলান্টিক এবং প্রশান্ত মহাসাগরের মধ্যবর্তী এই জলপথ দিয়ে যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের নির্মিত এ খালটি ১৯১৪ সালে চালু করা হয়। এরপর ১৯৭৭ সালে দেশটি পানামার সঙ্গে একটি চুক্তি করে খালটি তাদের কাছে হস্তান্তরের জন্য। তবে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত দুই দেশ যৌথভাবে পানামা খাল নিয়ন্ত্রণ করে।
বিবিসি বলছে, লাতিন আমেরিকার দেশ পানামার সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক বেশ ঘনিষ্ঠই ছিল। তবে ২০২৩ সাথে পানামার সাথে চীন নতুন করে অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের আলোচনা শুরুর পরই পানামার সাথে সম্পর্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন করে ভাবনা তৈরি হয়েছে। আর ট্রাম্প এখন অভিযোগ তুলছেন, মধ্য আমেরিকান দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের জাহাজ ও অন্য নৌযান থেকে অতিরিক্ত ফি আদায় করছে।
প্রসঙ্গত, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রই পানামা খাল সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করে থাকে। ৫১ মাইল বা ৮২ কিলোমিটার দীর্ঘ পানামা খাল আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগরের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করেছে এবং এটি বিশ্ব বাণিজ্যে মালামাল পরিবহনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
পানামা খালের কারণে দেশটির বিশাল ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে। আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগরকে একসাথে যুক্ত করেছে এই পানামা খাল। কয়েক বছর বন্ধ থাকার পর ২০১৬ সালের জুনে পানামা খালকে আরও প্রশস্ত করার পর খালটিকে জাহাজ চলাচলের জন্য আবারও খুলে দেওয়া হয়।
শতাব্দী প্রাচীন এই খালটি ১৯০০ সালের শুরুর দিকে তৈরি করা হয়েছিল এবং ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত এই খালের রক্ষণাবেক্ষণ যুক্তরাষ্ট্রের হাতেই ছিল। কিন্তু ১৯৯৯ সালে এই খারের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেয় পানামা।
প্রতি বছর প্রায় ১৪ হাজার জাহাজ এই খাল ব্যবহার করে থাকে। কন্টেইনারবাহী এসব জাহাজ মূলত গাড়ি, প্রাকৃতিক গ্যাস, সামরিক উপকরণসহ বিভিন্ন পণ্য পরিবহন করে থাকে।