অপরাধ ও দুর্নীতি ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ০৯:২৯

হারুন-বিপ্লবসহ ১৮৭ পুলিশ সদস্য কর্মস্থলে ফেরেননি

নিজস্ব প্রতিবেদক 
অন্তর্বর্তী সরকারের নির্দেশনার পরও কর্মস্থলে ফেরেননি আওয়ামী লীগ আমলে আলোচিত-সমালোচিত ডিআইজি মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ, অতিরিক্ত ডিআইজি বিপ্লব কুমার সরকারসহ পুলিশের ১৮৭ সদস্য। তাদের অবস্থান নিয়েও রয়েছে ধোঁয়াশা। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কর্মস্থলে না আসায় তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে সরকার। অনেকে চাকরিও হারাতে পারেন।

এমন পরিস্থিতিতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী গতকাল বুধবার বলেছেন, যেসব পুলিশ সদস্য এখনও কর্মস্থলে ফেরেননি, তাদের আর যোগ দিতে দেওয়া হবে না। তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা (ডিসিপ্লিনারি অ্যাকশন) নেওয়া হবে।

৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে পুলিশের শীর্ষ পর্যায় থেকে মাঠ পর্যায়ের প্রায় সব সদস্য আত্মগোপনে চলে যান। ৮ আগস্ট নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর পুলিশকে কর্মস্থলে ফেরানোর উদ্যোগ নেয়। ১৪ আগস্টের মধ্যে সবাইকে কাজে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। এর আগে ৭ আগস্ট পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ময়নুল ইসলামও বাহিনীর সদস্যদের ৮ আগস্টের মধ্যে কর্মস্থলে ফেরার আহ্বান জানিয়েছিলেন।

পুলিশ সদরদপ্তর জানায়, গত ১ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত পুলিশের এক ডিআইজি, সাত অতিরিক্ত ডিআইজি, দু’জন পুলিশ সুপার, এক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, পাঁচ সহকারী পুলিশ সুপার, পাঁচ পুলিশ পরিদর্শক, ১৪ এসআই ও সার্জেন্ট, ৯ এএসআই, সাত নায়েক ও ১৩৬ কনস্টেবল কর্মস্থলে অনুপস্থিত। তাদের অনেকের নামেই হত্যাসহ বিভিন্ন অভিযোগে মামলা হয়েছে।

এসব পুলিশ কর্মকর্তার মধ্যে অতিরিক্ত ডিআইজি প্রলয় কুমার জোয়ারদার, মেহেদী হাসান, সঞ্জিত কুমার রায়, খোন্দকার নুরুন্নবী ও জায়েদুল আলমও রয়েছেন।

তথ্যমতে, ১৮৭ পুলিশ সদস্যের মধ্যে ৯৬ জনের ছুটির মেয়াদ শেষ হলেও যোগ দেননি। ৪৯ জন কর্মস্থলে গরহাজির, তিনজন স্বেচ্ছায় ইস্তফা দিয়েছেন এবং অন্যান্য কারণে ৩৯ জন অনুপস্থিত।

কর্মস্থলে অনুপস্থিত পুলিশ সদস্যদের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এখনও কাজে যোগ দেননি– এমন পুলিশের সংখ্যা খুবই নগণ্য। নিশ্চয় তারা কোনো অপকর্মে জড়িত বলে যোগদান করছেন না। তাদের ব্যাপারে অনুসন্ধান করছি। বেআইনি কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত এসব পুলিশ সদস্যকে ধরে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য সবার সহযোগিতাও চান তিনি।

গতকাল গাজীপুরের কালিয়াকৈরের সফিপুর আনসার-ভিডিপি একাডেমির ইয়াদ আলী প্যারেড গ্রাউন্ডে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ৪০তম বিসিএস ক্যাডার কর্মকর্তা এবং ২৫তম ব্যাচ (পুরুষ) রিক্রুট সিপাহিদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।

সেনাবাহিনীর বিষয়ে তিনি বলেন, জনসেবা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে সেনাবাহিনী মাঠে আছে। তাদের একটি ক্ষমতার ভেতরে কাজ করতে হবে। আমাদের অন্যান্য বাহিনীরও কিছু স্বল্পতা রয়েছে, এটি পূরণেও সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দরকার। সেনাবাহিনীকে দেওয়া বিশেষ ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতার সুফল জনগণ ভোগ করবে। তিনি আরও বলেন, সংস্কারের মাধ্যমে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীকে দক্ষ, পেশাদার এবং সময়োপযোগী করে গড়ে তোলা হবে।

এর আগে অনুষ্ঠানে প্রশিক্ষণার্থীদের উদ্দেশে উপদেষ্টা বলেন, স্বৈরাচার পতনের পর বাংলাদেশ নবজাগরণে উজ্জীবিত। বিগত সরকার ও সরকারি প্রতিষ্ঠান জনবান্ধব হতে পারেনি বলেই গণঅভ্যুত্থানের মুখে দায়িত্বশীলদের দেশত্যাগ করতে হয়েছে। এ গণঅভ্যুত্থানে আত্মাহুতি দিয়েছেন আবু সাঈদ, মীর মুগ্ধ, ইয়ামিন, ফাইয়াজদের মতো হাজারো ছাত্র-জনতা। আপনারা দেশ ও জনগণের কল্যাণে সততা, নিষ্ঠা ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে কাজ করবেন।

জুলাই বিপ্লবের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতির সময়ে জনজীবনে স্বস্তি ফেরাতে ভূমিকা রাখায় আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের ধন্যবাদ জানান তিনি।

আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ছয় বিসিএস কর্মকর্তা এবং ৯০৮ রিক্রুট সিপাহি নির্ধারিত মৌলিক প্রশিক্ষণ সমাপ্ত করেন। অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা কৃতিত্ব অর্জনকারীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন। এ সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ আবদুল মোমেন, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।