অর্থ ও বাণিজ্য ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ১২:৪২

বাড়তি দামেই বিক্রি হয়ে আসছে ডিম-আলু-পেঁয়াজসহ কাঁচা তরকারি 

আমাদের কাগজ ডেস্ক : সরকারের নির্ধারিত দামের তোয়াক্কা না করে মনগড়া দামে এখনও বিক্রি হচ্ছে ডিম, আলু ও পেঁয়াজ। নির্দেশনা উপেক্ষা করে আগের বাড়তি দামেই এগুলো বিক্রি হচ্ছে বাজারে। এর আগে, গত ১৪ সেপ্টেম্বর প্রথমবারের মতো বেঁধে দেওয়া হয় এইসব পণ্যের দাম। অথচ নির্ধারণ করে দেওয়ার ১৫ দিন পরেও বাজারে এসব দ্রব্যের দাম কার্যকর হয়নি। 

আজ (শুক্রবার) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি ফার্মের ডিমের দাম ১২ টাকা, আলু খুচরা পর্যায়ে ৩৫-৩৬ টাকা এবং দেশি পেঁয়াজ ৬৪-৬৫ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।ফার্মের ডিম প্রতি ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকায়। আর প্রতি হালি (৪ পিচ) বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকায়। ফলে একটি ডিমের দাম পড়ছে ১৩ টাকা ৭৫ পয়সা। অথচ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডিমের দাম বেঁধে দিয়েছিল সর্বোচ্চ ১২ টাকা।

এই দিন বাজারে ঘুরে দেখা যায়, বাজারে আলু বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫০ টাকা, যেখানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এর দাম বেঁধে দিয়েছিল ৩৫-৩৬ টাকা। 

ফলে নির্ধারিত দামের চেয়ে কেজিতে ১৪ /১৫ টাকা বেশি বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে দেশি পেঁয়াজের দাম সরকার ৬৪/৬৫ টাকা বেধে দিলেও বাজারে এর চেয়ে ১৫ থেকে ২৫ টাকা বাড়িয়ে ৮০ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ট্রেডিং কর্পোরেশন অফ বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, সবশেষ কর্মদিবসে বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ৮৫ টাকা কেজি দরে, আর আলু বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ৪৫ টাকা কেজি দরে। সেই সঙ্গে ডিম প্রতি হালি সর্বোচ্চ ৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

টিসিবির সহকারী পরিচালক (বাজার তথ্য) নাসির উদ্দিন জানান, যেই পেঁয়াজ বর্তমান বাজারে সর্বোচ্চ ৮৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। গত বছর এই সময় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩৮ থেকে ৪৫ টাকায়। সেই হিসেবে এক বছরে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৯৮ দশমিক ৮০ শতাংশ।

তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে যে আলু ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে তা গত বছর এই সময় সেই আলু বিক্রি হয়েছে ২৩ থেকে ৩০ টাকায়। ফলে এক বছরে আলুর দাম বেড়েছে ৬৪ দশমিক ১৫ শতাংশ। পাশাপাশি ডিমের দাম এক বছরে বেড়েছে ১ দশমিক ৩ শতাংশ।

এদিকে এমন বাড়তি দাম নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ ক্রেতারা। তারা বলছে, সরকার দাম নির্ধারণ করে দিলেও আমরা ক্রেতারা এসব আলু, ডিম, পেঁয়াজ এখনও বাড়তি দামেই কিনছি। বাজার মনিটরিং যদি না থাকে তাহলে দাম নির্ধারণ করে দিয়ে কি লাভ হলো? দাম নির্ধারণের আগেও যে দামে কিনেছি এখনও সেই বাড়তি দামেই কিনছি।

বেসরকারি এক শিক্ষক বলেন, ব্যবসায়ীরা এখন দেশ পরিচালনা করে। তা না হলে, সরকার দাম বেঁধে দিলেও কেন মানছেন না ব্যাবসায়ীরা। 

বাজারের এই পরিস্থিতি বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে এক ক্রেতা বলেন, বাজারে এমন কিছু নেই যার দাম বাড়তি না। এই পরিস্থিতিতে আমরা সাধারণ ক্রেতারা খুব খারাপ অবস্থায় আছি। সব কিছুর দাম বাড়তি এর মধ্যে বাজার মনিটরিংয়ের কোনো উদ্যোগ দেখছি না। সবচেয়ে ভয়ংকর ব্যাপার হলো যেগুলোর দাম সরকার কমালো সেগুলোও বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজ, আলু, ডিমের দাম সরকার নির্ধারণ করে দিলেও তারচেয়ে অনেক বেশি দামে আমাকে এগুলো কিনতে হলো। তাহলে লোক দেখানো দাম নির্ধারণের প্রয়োজন কি ছিল। নির্ধারিত দামের চেয়ে অনেক বাড়তি দামে এগুলো বাজারে ওপেন বিক্রি হচ্ছে অথচ দেখার কেউ নেই।

সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের চেয়েও কেন বেশি দামে ডিম, আলু, পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে গুলশান সংলগ্ন বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী এরশাদ আলী বলেন, এই বাড়তি দামের বিষয়ে আমাদের কোনো হাত নেই। আমরা যে দামে কিনে আনি, অল্প কিছু লাভ করে বিক্রি করি। কারা দাম বাড়িয়ে রেখেছে তা বড় বড় ব্যবসায়ীরা বলতে পারবে। আমরা যখন কম দামে ডিম, আলু, পেঁয়াজ কিনতে পারব তখন কম দামে বিক্রি করতে পারব। তার আগ পর্যন্ত আমাদের কিছুই করার নেই।

এদিকে শীতের সবজিতে বাজার জমজমাট না হলেও আগাম বেশ কিছু শীতকালীন সবজি এরইমধ্যে চলে এসেছে বাজারে। তবে এর মধ্যে হাতেগোনা কিছু সবজির দামই নাগালের মধ্যে, বাকি সব সবজির দাম আকাশছোঁয়া। বাজারে এখনও পর্যাপ্ত সবজি আসেনি, যে কারণে দামও তুলনামূলক বেশি। তবে শীত আসার সঙ্গে সঙ্গে এই দাম কমে আসবে।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি শিম ২০০ টাকা, চায়না গাজর ১৪০ টাকা, মূলা ৬০-৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি পিস ফুলকপি ও বাঁধাকপির দাম ৬০ টাকা। এ ছাড়া, প্রতি কেজি গোল বেগুন ১০০ টাকা, লম্বা বেগুন ৮০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, পটল ৬০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা, ঝিঙে ৬০ টাকা, ধুন্দল ৬০ টাকা, কচুরমুখি ৯০ টাকা এবং কচুর লতি ৮০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। প্রতি পিস জালি কুমড়া (চাল কুমড়া) ৬০ টাকা ও লাউ ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাঁচা কলা প্রতি হালি ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

আমাদেরকাগজ/এমটি