লাইফস্টাইল ডেস্ক: বর্তমান প্রজন্মের অনেকাংশই বিয়ে ফ্যান্টাসিতে ভুগছে। অনেকেই হয়তো এ ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করতে পারেন। বলতে পারেন, বিয়ে মানবজীবনের একটি আবশ্যকীয় অংশ। হ্যাঁ, সে যুক্তি অকপটে স্বীকার করতে আপত্তি নেই। তবে, সেক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে তাদের একটু বিশেষ খেয়াল রাখার অনুরোধ থাকবে। বর্তমান তরুণ-তরুণীর মধ্যে বিয়ের প্রতি স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি ঝোঁক লক্ষ্য করা যায়। তাদের কাছে বিয়ে করার কারণ জানতে চাইলে অধিকাংশই এর সদুত্তর দিতে ব্যর্থ হবে। কারণ, তারা বিয়ে মাত্রই সঙ্গীনীর সঙ্গে কাটানো সুন্দর সময়গুলোকেই বুঝেন। কিন্তু বিয়ে মানে যে দায়িত্ব, দু’টো পরিবারের সাথে আরও কিছু মানুষের সম্পর্ক তৈরি হওয়া এবং তা টিকে রাখার লড়াই তা তাদের কাছে অনেকটা হেয়ালিপনাই।
বিয়ে শুধু সামাজিকতার বিষয় নয়, এটি জৈবিক চাহিদার সাথেও জড়িত। অনেকে উপরের বর্ণিত কথাগুলো খুব বেশি বড় করে দেখেন এবং বিয়েকে যতদূর সম্ভব এড়িয়ে যান। তাদের কাছে বিয়ে মানেই উটকো ঝামেলা, বাড়তি চাপ। ক্যারিয়ারের পেছনে ছুটে চলাতেই তাদের প্রাধান্য বেশি। ক্যারিয়ারের পেছনে ছুটতে গিয়ে বিয়ের উপযুক্ত সময় পার করে ফেলেন অনেকে। তখন দেখা দেয় নানাবিধ সমস্যা। বিয়ে করার মতো তাদের কাছে উপযুক্ত কোন কারণ থাকে না, বিধায় পরে আফসোস করতে হয়। এসব শারীরিক, মানসিক সমস্যা এবং ফ্যান্টাসি থেকে বেঁচে প্রকৃত কারণগুলো জানার চেষ্টা করি। এরপর বিয়ের উপযুক্ত সময় বুঝে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
যে কারণে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবেন-
একাকীত্বের কারণে অথবা অন্য সমস্যার কারণেও মানুষ বিষণ্ণতায় ভুগতে পারে। আর মানুষ যখন হতাশায় ভুগে তখন কি পরিমাণ মানসিক বিপর্যয় ঘটছে তার নিজের, তা সে বুঝতে পারে না। কারণ বিষণ্ণতার প্রথম উপসর্গ হচ্ছে আত্ম-উপলব্ধির হ্রাস পাওয়া। তাই বিষণ্ণতাকে সনাক্ত করতে এবং দূর করতে প্রয়োজন একজন সঙ্গীর। যে সব সময় আপনার সাথে থাকবে, যার সাথে আপনি সবকিছু শেয়ার করতে পারবেন।
পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, অল্প বয়সে মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে অবিবাহিতদের সংখ্যা বিবাহিতদের দ্বিগুণ। কারণ স্বামী-স্ত্রীরা প্রয়োজন হলে একে অপরের ভালো যত্ন নিতে পারেন। এছাড়া সহযোগীদের সমর্থন ও সাহায্যও পেতে পারেন। ফলে বিবাহিতরা নিজেদের যত্ন নেওয়ার জন্য দম্পতির প্রতি দায়িত্ববোধ ও বাচ্চা নেওয়ার কথা ভাবেন। তারা বুঝতে পারেন যে, প্রয়োজন পড়লে সহায়তা করার জন্য তাদের কেউ একজন রয়েছেন। তাই কেউ দীর্ঘজীবী হতে চাইলে তাকে বিয়ে করার পরামর্শ দিয়েছেন অভিজ্ঞরা। তবে সত্যিকারের আদর্শ জীবনসঙ্গী না পেয়ে বিয়ে করলে সেটা চরম ভুল হবে বলেও মন্তব্য করেন তারা।
শারীরিক সম্পর্ক হৃৎপিণ্ডের জন্য উপকারি। হার্ট রেট ভালো রাখার পাশাপাশি ‘এস্ট্রোজেন’ এবং ‘টেস্টোস্টেরনের’ মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। গবেষকরা জানান, যারা সপ্তাহে অন্তত দু’দিন শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হন তাদের হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর আশঙ্কা কম।
যেসব দম্পতি একে অপরকে ভালোবাসেন ও বিশ্বাস করেন তারা প্রতিনিয়ত যৌনসুখ উপভোগ করেন। ফলে তাদের যৌনসঙ্গী খোঁজার প্রয়োজন হয় না। এতে তাদের যৌনজীবনে বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কম থাকে। তবে যে দম্পতি এর ব্যতিক্রম ঘটায় এবং একে অপরের সঙ্গে প্রতারণা করে তাদের যৌনরোগ সংক্রান্ত ঝুঁকি বেশি থাকে।
২০১৩ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, যে সকল মানুষ মরণ ব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিল তাদের মধ্যে শতকরা ২০ ভাগ এর বেশি মানুষ আরোগ্য লাভ করতে সক্ষম হত যদি তারা বিবাহিত হত। এই সাফল্যের হার কেমোথেরাপির থেকেও বেশি। একটি স্বাভাবিক স্থিতিশীল সম্পর্কই প্রথম ধাপের ক্যান্সার সনাক্ত করতে পারে। আর এই বন্ধনই ক্যান্সারের সাথে লড়ে সুস্থ হওয়ার অনুপ্রেরণা যোগায়। একজন উপর্যুক্ত সঙ্গিনী তার সঙ্গীকে খারাপ এবং জীবনের জন্য ঝুঁকিকর কাজ করা থেকে বিরত রাখতে পারে। যেমনঃ মদ্যপান, মাদক সেবন ইত্যাদি।
অবিবাহিত ব্যক্তি বিবাহিত দম্পতিদের তুলনায় টাকা কম খরচ করে এটা অবশ্যই সত্য। তবে দম্পতিরা একত্রে অনেক অর্থ উপার্জন করতে পারেন এবং তাদের আর্থিক অবস্থাও অনেক সমৃদ্ধ হয়। অন্যদিকে অবিবাহিতরা কম উপার্জনেই তাদের জীবনধারণ করতে পারেন। তাই ভালো কাজ ও বেশি উপার্জনের লক্ষ্যও তাদের কম থাকে। কিন্তু বিবাহিত পুরুষরা তাদের স্ত্রী ও সন্তানদের প্রতি দায়িত্ব অনুভব করে আর্থিক অবস্থার উন্নতি করার চেষ্টা চালিয়ে যান এবং সফল হন।
বিয়ের পর থেকে যেহেতু একটি দম্পতির অর্থনৈতিক সচ্ছলতা বাড়ে, সেহেতু জীবনযাত্রারও উন্নতি ঘটে। ফলে তারা একটি সুন্দর স্থানে রুচিশীল বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্ট কেনেন। এছাড়া তাদের সন্তানদের জন্য ভ্রমণ, ভালো খাবার ও উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা করারও সামর্থ্য তৈরি হয় ওই দম্পতির।
আমাদেরকাগজ/এইচএম