রায়হান শোভন
আবাসিক হলে খাবারের মান বৃদ্ধি, বাসের রুট বাড়ানো, গবেষণায় পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দসহ বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) নির্বাচিত নেতারা। কিন্তু তাদের দায়িত্বকালে তার কিছুই তারা বাস্তবায়ন করতে পারেননি। ব্যর্থতার দায় নিয়ে তারা মেয়াদকাল শেষ করেছেন।
গত মার্চে ডাকসুর নির্বাচিত কমিটির মেয়াদ শেষ হয়। কিন্তু করোনা মহামারি অজুহাতে ফের নির্বাচনের উদ্যোগ নিচ্ছে না বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এতে আবারও ডাকসু নির্বাচন নিয়ে দীর্ঘ বিরতির শঙ্কা তৈরি হয়েছে। যদিও গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রতি বছর নিদিষ্ট সময়ে ডাকসু নির্বাচন হওয়ার কথা।
দীর্ঘ ২৮ বছর বিরতির পর ২০১৯ সালের ১১ মার্চ ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে ভিপি হিসেবে নুরুল হক নুর ও জিএস হিসেবে গোলাম রাব্বানী নির্বাচিত হন। সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের প্যানেল থেকে ভিপি পদে নুরুল হক নুর, সমাজসেবা সম্পাদক পদে আখতার হোসেন বাদে বাকি ২৩ জন ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন। ব্যাপক কারচুপির অভিযোগে ছাত্রদল ও বাম ছাত্র সংগঠনগুলো এ নির্বাচন বর্জন করেন। এ নির্বাচনের ফলে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে কিছুটা আশার আলো সঞ্চার হলেও বাস্তবিক অর্থে তেমন কোনো সুফল তারা পাননি।
নির্বাচনের আগে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ ও ছাত্রলীগের প্যানেলর পক্ষ থেকে ১৮ ও ২৮ দফার আশা জাগানিয়া ইশতেহার থাকলেও বেশিরভাগই তারা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচিত হওয়ার পর ইশতেহার দেয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষার চেয়ে নিজেদের কর্তৃত্ব স্থাপনে তাদের বেশির ভাগ সময় পার হয়েছে। যার ফলে ইশতেহারের বেশিরভাগ প্রতিশ্রুতিই তারা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে।
সাধারণ শিক্ষার্থীরা মনে করছেন, ভিপি ও জিএস এর দ্বন্দের কারণে তারা ডাকসু থেকে তেমন আশানুরূপ ফলাফল পাননি। তবে তারা মনে করেন, সফলতা-ব্যর্থতা যাইহোক না কেনো নিজেদের অধিকার ও সমস্যা সমাধানের জন্য
হলেও ডাকসু নির্বাচনের ধারা অব্যাহত রাখা উচিত।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সমাজকল্যাণ বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আলী হাসান আমাদের কাগজকে বলেন, আমাদের অনেক প্রত্যাশা ছিল ডাকসুর নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে। তারা আমাদের প্রত্যাশার ৩০ শতাংশ পূরণ করতে সমর্থ হয়েছে, বাকি ৭০ শতাংশ পূরণে তারা ব্যর্থ।
তিনি বলেন, ডাকসু নির্বাচনের ধারা অব্যাহত থাকা খুবই জরুরি। কেননা এ বছর তারা হয়তো আমাদের আংশিক প্রত্যাশা পূরণে সমর্থ হয়েছে সামনে তারা আমাদের প্রত্যাশার আরও বিরাট জায়গা পূরণে সমর্থ হতে পারে। ডাকসুর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা অন্তত তাদের অধিকারের কথা বলতে পারুক এটাই আমার প্রত্যাশা।
ডাকসুর সদ্য সাবেক কমিটির প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তির বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক এজিএস সাদ্দাম হোসেন আমাদের কাগজকে বলেন, ব্যর্থতা আর সফলতা মিলিয়ে যেকোনো সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। তেমনি আমাদেরও ব্যর্থতা ও সফলতা দুটোই ছিল। তবে আমাদের সবচেয়ে বড় স্বার্থকতা দীর্ঘ সময় পর হলেও আমরা ডাকসু নির্বাচন করতে পেরেছি। তিনি বলেন, আশা করছি ছাত্র-ছাত্রীদের অধিকার সংরক্ষণের স্বার্থে এই নির্বাচনের ধারা অব্যাহত থাকবে। আর ডাকসু নির্বাচন একটি ক্যালেন্ডার ইভেন্টে পরিণত হবে।
কবে নাগাদ ডাকসু নির্বাচন হতে পারে এ প্রসঙ্গে ডাকসুর এজিএস সাদ্দাম হোসেন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কাছে আমাদের প্রত্যাশা থাকবে করোনাকালীন সময় কেটে গেলে এবং বিশ্ববিদ্যালয় খুললে যেনো অতিসত্বর নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয়।
এই বিষয়ে জানতে ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর ও জিএস গোলাম রাব্বানীর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও কাউকে পাওয়া যায়নি।
ডাকসুর সদ্য সাবেক কমিটির সফলতা-ব্যর্থতার বিষয়ে জানতে চাইলে ডাকসু সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান আমাদের কাগজকে বলেন, সফলতা-ব্যর্থতার বিষয়ে বিচার বিবেচনা করবে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও কেনো ডাকসু নির্বাচনের কোনো প্রস্তুতি নেই, এ প্রসঙ্গে উপাচার্য বলেন, নির্বাচন কবে হবে তা সময় হলে জানা যাবে। এখনই এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাচ্ছি না।