বাঘ ও ছাগলের ওই গল্পটা আপনারা নিশ্চয়ই জানেন।
এক ছাগল তৃষ্ণার্ত হয়ে নদীর দিকে গেছে। বাঘ তা দেখতে পেয়ে এগিয়ে গেল। তার মূল পরিকল্পনা ছাগলটাকে খেয়ে ফেলা। এটা সে সরাসরি করতে পারছে না। চক্ষুলজ্জায় পড়েছে। কাজেই সে বলল, ‘এই বেটা, তুই পানি নোংরা করছিস কেন?’ ছাগল ভয়ার্ত গলায় বলল, ‘জনাব, আমি তো পানি নোংরা করছি না। পানি খাচ্ছি।’ বাঘ হুংকার দিয়ে উঠল, ‘আবার মুখে মুখে কথা। হারামজাদা বেয়াদব!’ এই বলেই বাঘ ঝাঁপিয়ে পড়ল ছাগলের ওপর।
গল্পটি বললাম, কারণ, আমরা এখন ক্রমাগত ছাগলের ওপর ঝাঁপ দিচ্ছি এবং ঝাঁপ দেওয়ার আগে যুক্তি দাঁড় করাচ্ছি। কারণ, আমরা যুক্তিবাদী প্রাণী। যুক্তি ছাড়া কিছুই করি না।
স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় শিক্ষকদের এক অংশ নকল সাপ্লাইয়ে নেমে পড়েছেন। অঙ্ক কষে দিচ্ছেন, বইয়ের কোন অংশ লিখতে হবে দেখিয়ে দিচ্ছেন, এক ছাত্রের কাছ থেকে নকল এনে অন্য ছাত্রকে দিচ্ছেন। এই সব কাজ করছেন অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে। তাঁদেরও যুক্তি আছে। তাঁরা বলছেন, শিক্ষক হিসেবে ছাত্রদের সাহায্য করা তাঁদের কর্তব্য। তাঁরা কর্তব্য পালন করছেন। একজন তো আমাকে খুব জোরের সঙ্গে বললেন, ‘এরা গ্রামের স্কুলের ছেলেপুলে, শহরের ছাত্রদের সঙ্গে কম্পিটিশনে পারবে না। একটু–আধটু সাহায্য তো করতেই হবে।’ আমি বললাম, ‘এই যে অন্যায়টা করছেন, আপনার খারাপ লাগছে না?’
: অন্যায়? এটাকে অন্যায় বলছেন কেন? তা ছাড়া সবাই তো অন্যায় করছে। করছে না?
যুক্তিটা হচ্ছে সবাই যখন অন্যায় করছে, তিনিও করতে পারেন। ন্যায়–অন্যায়ের সীমারেখা তাঁর কাছে অস্পষ্ট হয়ে আসছে। যতীন বাবু নামে একজন অঙ্ক শিক্ষকের সঙ্গে ছোটবেলায় আমার পরিচয় ছিল। তিনি আমার ছোট ভাইকে অঙ্ক শেখাতেন। বিপ্লবী না হয়েও তিনি বাঘা যতীন নামে প্রসিদ্ধি লাভ করলেন কঠিন শিক্ষক হিসেবে। পরীক্ষার হলে তিনি উপস্থিত থাকলে কারও সাধ্য নেই এদিক–ওদিক তাকায়, নকল তো অনেক দূরের কথা। এই তিনিই কিন্তু ছাত্রীদের ব্যাপারে কিচ্ছু বলতেন না। মেয়েরা কোলের ওপর বই রেখে টুকলিফাইং করতে থাকলেও তিনি নির্বিকার। তাঁর যুক্তি হচ্ছে, পরীক্ষার জন্য মেয়েগুলোর বিয়ে আটকে থাকে। যেভাবে পারে, পাস করে বেরিয়ে যাক।