নিজস্ব প্রতিবেদক।।
ক্ষুদ্র ব্যবসার নামে সিটি কর্পোরেশন থেকে লাইসেন্স নিয়ে রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশান-বনানীতে চলছে মাদক ও দেহব্যবসা। এছাড়াও গ্রাহক আকৃষ্ট করার জন্য প্রতিনিয়ত চলছে সোশ্যাল মিডিয়াসহ নানা মাধ্যমে প্রচারণা।
‘আওয়ার থেরাপিস্ট ইজ ইয়াং... অ্যান্ড সো হট।’ বাংলায়, ‘আমাদের থেরাপিস্টরা কচি এবং খুব আকর্ষণীয়।’ গুলশানের অ্যারোমা থাই স্পা’র প্রিন্ট বিজ্ঞাপন এটি। নিজেদের ফেসবুক পেজে স্পন্সর বিজ্ঞাপন হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির প্রচারণা এমন!
বিজ্ঞাপনটিতে গ্রাহকদের দুই ধরনের ম্যাসেজ দেয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ‘নুরু ম্যাসেজ’ ও ‘বডি টু বডি ম্যাসেজ’। আরও লেখা আছে, ‘উই হ্যাভ নিউ ফোর গার্লস (আমাদের সংগ্রহে নতুন চারটি মেয়ে আছে)।’ম্যাসেজ পার্লারের এমন বিজ্ঞাপনে ম্যাসেজ ছাড়াও স্পষ্টভাবে অন্যকিছুর ইঙ্গিত দেয়া হচ্ছে! ভালো করে লক্ষ্য করলে বোঝা যায়, বিজ্ঞাপনে ‘নুরু ম্যাসেজের’ কথা উল্লেখ রয়েছে। নুরু ম্যাসেজ বলতে শরীরের সংবেদনশীল ও স্পর্শকাতর জায়গাগুলোতে ম্যাসেজ করা বোঝায়, যা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে জনপ্রিয়। ‘বডি টু বডি ম্যাসেজ’ তার চেয়েও ভয়ংকর, এটি অনেকেরই জানা...।
শুধু অ্যারোমা নয়, গুলশান-বনানীতে ডজনখানেক স্পা সেন্টার অশ্লীল বিজ্ঞাপন আর মেয়েদের প্রলোভন দেখিয়ে বডি ম্যাসেজের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। কিন্তু স্পা পরিচালনা করার জন্য যে বৈধ কাগজ কিংবা ট্রেড লাইসেন্স দরকার হয় তার কিছুই নেই তাদের কাছে। আর অনুমতি পত্র হিসাবে আছে সিটি কর্পোরেশনের কাছ থেকে হোটেল, বিউটি পার্লার,সেলুন আর ব্যায়ামাগারের ট্রেড লাইসেন্স। যা সম্পূর্ণ অবৈধ ।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, গুলশান- বনানী এলাকাতে অ্যারোমা স্পা ছাড়াও দীর্ঘদিন দাপটের সাথে ডব্লিউ বিউটি অ্যান্ড স্পা, ডিওএইচএসের ফনিক্স হেলথ কেয়ার, গুলশান সেলুন অ্যান্ড স্পা, লেটস রিল্যাক্স স্পা, ঢাকা গুলশান স্পা, ফেমাস স্পা, হোয়াইট বিউটি সেলুন অ্যান্ড স্পা,স্পা জোন, ডায়মন্ড বিউটি অ্যান্ড স্পাসহ ছোটবড় একাধিক স্পা সেন্টার এই অবৈধ ব্যবসা করে আছে।
গুলশান-১ এর ডিএসসিসি মার্কেটের বিপরীতে অবস্থিত 'স্পা জোন' কর্মকর্তা হাবিবুর রহমানের সঙ্গে সেবাগ্রহীতা সেজে কথা বললে বেড়িয়ে আছে ভিতরের সকল তথ্য। হাবিবুর রহমান জানান,‘উক্ত বয়সভিত্তিক বিভিন্ন ক্যাটাগরির ১০-১২ জন মেয়ে দিয়ে ম্যাসেজ করানো হয়। বয়স ছাড়াও ম্যাসেজে পারদর্শী ও অপারদর্শীদের আলাদা ক্যাটাগরি রয়েছে। ইউনিভার্সিটিপড়ুয়া কম বয়সী মেয়েরাও আছে। যদি কেউ প্রশিক্ষিত মেয়েদের নিয়ে সারা শরীর ম্যাসেজ করাতে চান তাহলে খরচ পড়বে ঘণ্টাপ্রতি ২৫০০ থেকে ৩০০০ টাকা। যদি এক ঘণ্টা ফুল কাজ করেন তাহলে পড়বে পাঁচ হাজার। ভালো ক্যাটাগরীর আকর্ষণীয় মেয়েদের ক্ষেত্রে ঘণ্টায় ছয় থেকে সাত হাজার পড়বে।’
পুলিশের ঝামেলা হবে না তো? জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘কোনো সমস্যা নাই, আমাদের সব বৈধতার কাগজ আছে। আমরা প্রশাসনকে ম্যানেজ করি, নিয়মিত মাসোয়ারা দেই। কোনো সমস্যা নাই।’
এছাড়াও কথা হয় গুলশানের ব্লু ট্যারেস স্পা নামের একটি স্পা অ্যান্ড ওয়েলনেস সেন্টারের কর্মকর্তার সঙ্গে। তারা সিটি কর্পোরেশনের কাছ থেকে বিউটি সেলুনের ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে পরিচালনা করছে ম্যাসেজ সেন্টার, করছেন অসামাজিক কার্যকলাপ!
এছাড়া স্পা নিয়ে কাজ করার অনুসন্ধান করার সময় কথা হয় ব্যাবসায়ী আতাউর রহমানের (ছদ্মনাম) সাথে। যিনি একটি স্পা সেলুনে সার্ভিস নিতে গিয়ে ব্ল্যাকমেইলের শিকার হয়েছেন। তিনি আমাদের কাগজকে জানান, ‘শরীর ম্যাসেজ করানোর সময় আমাকে না জানিয়ে আপত্তিকর ছবি ধারণ করা হয়। এর কয়েক দিন পর আমাকে ফোনে ব্ল্যাকমেইল করা হয়। পাঁচ লাখ টাকা না দিলে ছবিগুলো ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়। পরে আমি টাকা দিয়ে বিষয়টি মীমাংসা করি এবং পুলিশের কাছে এ বিষয়ে অভিযোগও করি।’
কিভাবে দিনের পর দিন প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে চলছে এমন অবৈধ কার্যক্রম জানার জন্য পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মোস্তাক আহমেদ সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমরা তো প্রতি মুর্হূতে অভিযান পরিচালনা করে আসছি। কিন্তু আমাদের চেয়ে এক্ষেত্রে সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্ব একটু বেশি। কারণ তাদের অনুমতি পত্র নিয়েই স্পাগুলো কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
এবিষয়ে কথা বলার জন্য একাধিক বার সিটি কর্পোরেশনে যোগাযোগ করা হলেও কারো কথা বলা সম্ভব হয়নি।






















